বাংলাদেশের রাজধানীকে ঘিরে রয়েছে চারটি নদ-নদী। স্বাদুপানির এ রকম নদ-নদী দুনিয়ার অন্য কোনো দেশের রাজধানীতে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। রাজধানীর ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত চারটি নদ-নদীই দখল ও দূষণের নির্মম শিকার। যে নদ-নদীগুলো হতে পারে রাজধানীবাসীর গর্বের অনুষঙ্গ, কিছু লোভী মানুষের কারণে তার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। ৪০০ বছর আগে ঢাকা সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল বুড়িগঙ্গা নদীর কারণেই। কালের বিবর্তনে ঢাকা এখন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী। এটি ১৬ কোটির বেশি মানুষের দেশ বাংলাদেশের বৃহত্তম নগরীই শুধু নয়, বিশ্বের অন্যতম মেগাসিটি। দেড় কোটি মানুষের এই নগরীর ফুসফুস হিসেবে বিরাজমান নদ-নদীগুলোর সুরক্ষায় টাস্কফোর্স গঠনের তাগিদ দিয়েছেন নগরবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। বলেছেন, নদ-নদীগুলোর পাড় দখল করে সুউচ্চ ভবন ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। নদ-নদীগুলো বাঁচাতে এগুলো শুধু উচ্ছেদ নয়, পাড় সংরক্ষণের কাজও একই সঙ্গে শুরু করতে হবে। নদ-নদীগুলোর পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বনায়ন-সবুজায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দায়িত্ব সারলে চলবে না। তা যাতে আবার অপদখলের শিকার না হয় নিশ্চিত করতে নদ-নদীগুলোর পাড় সুরক্ষার উদ্যোগও একই সঙ্গে নেওয়া দরকার। নদ-নদী সুরক্ষায় নদীপথ চালুর উদ্যোগও থাকতে হবে। নদীপথে যানজটের সম্ভাবনা কম থাকে। নদীপথ ব্যবহারে যানজট যেমন এড়ানো যাবে তেমন পণ্য পরিবহনও সহজতর হবে। দেশের নদ-নদী সুরক্ষায় আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে নদী কমিশন গঠিত হয়েছে। নদী সুরক্ষায় আইন প্রণয়নও করা হয়েছে। আইন কার্যকরের লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠনও জরুরি। ঢাকার চার নদ-নদীর দখল-দূষণ বন্ধ হলে রাজধানীর পরিবেশ হবে সুন্দর। নদ-নদীগুলোর অস্তিত্বও টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। নদ-নদী সুরক্ষায় যে কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা জরুরি। নদ-নদীর দূষণ রোধে প্রশাসনকে কড়া হতে হবে। শুধু রাজধানীর নদ-নদী নয়, সারা দেশের নদ-নদীর দখল-দূষণ রোধেও সরকারের বাড়তি নজর থাকা এখন সময়ের দাবি। এ ব্যাপারে নাগরিক
সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।