মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইয়াতিমের প্রতিপালনে জান্নাতের গ্যারান্টি

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

ইয়াতিমের প্রতিপালনে জান্নাতের গ্যারান্টি

সমাজে নিঃসঙ্গ, অনাথ ও পিতৃহীন নাবালক সন্তানরা ইয়াতিম নামে পরিচিত। ইয়াতিমের সঙ্গে ভালো ব্যবহার, তাদের আহার, বস্ত্র ও পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। ইয়াতিমকে ধমক দেওয়া, গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া এবং তাদের সম্পত্তি গ্রাস করা মহাপাপ। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি। ভক্ষণ ও আত্মসাতের নিয়তে ইয়াতিমের সম্পদের ধারেকাছে যাওয়াও নিষিদ্ধ। আল্লাহ আল কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয় যারা ইয়াতিমের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা মূলত তাদের পেটে আগুন ভক্ষণ করছে; আর অচিরেই তারা প্রজ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে।’ সূরা আন নিসা, আয়াত ২, ১০; সূরা দোহা, আয়াত ৯-১০। আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে জীবনোপকরণে সমৃদ্ধি, স্বাচ্ছন্দ্য ও ধনসম্পদ দান করেন তার দায়িত্ব হলো শুকরিয়াস্বরূপ অনাথ, দুস্থ ও ইয়াতিমের প্রতিপালন, সহানুভূতি প্রদর্শন, অন্ন-বস্ত্র জোগান ও শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা। আল কোরআনে ইয়াতিমকে সম্মান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইয়াতিমের প্রাপ্য আদায় এবং তাদের ব্যয়ভার বহন করলেই যৌক্তিক, মানবিক ও আল্লাহ-প্রদত্ত ধনসম্পদের কৃতজ্ঞতা (শুকরিয়া) সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন হয়ে যায় না, বরং তাদের সম্মানও করতে হবে। নিজেদের সন্তানের মতো ইয়াতিমদের লালন-পালন করতে হবে, হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়াতিমের ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করে দিয়েছেন, যাতে তাদের প্রতি অসম্মান ও অযত্ন না হয়, তাদের সম্পত্তি যাতে আত্মসাৎ না হয়। ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী ধ্বংস হয়ে যাবে। ইয়াতিমের পাশে যারা দাঁড়ায়, যারা খোঁজখবর রাখে, যারা ইয়াতিম বালক-বালিকাকে লেখা -পড়া শেখায়, যারা ইয়াতিমদের বিয়ে-শাদির ব্যবস্থা করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।  জান্নাতি মানুষের স্বভাব হলো ইয়াতিম ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যারা এই পার্থিব জগতে ইয়াতিমদের বুকে আগলে রাখে আল্লাহতায়ালা তাদের পরকালীন জীবনে অফুরন্ত নিয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধ করে দেবেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো ইয়াতিমের মাথায় হাত বুলাবে, তাকে প্রত্যেক স্পর্শিত চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে। আমি ও ইয়াতিম প্রতিপালনকারীর অবস্থান এই দুই আঙ্গুলের মতো পাশাপাশি হবে। চাই সে ইয়াতিম তার নিজের হোক বা অন্যের। এই কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন।’ বুখারি, মুসলিম, আত-তারগিব ওয়াত তারহিব। অর্থাৎ জান্নাতে তার বাসগৃহ হবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরের নিকটবর্তী। সন্দেহাতীতভাবে ইমানদারদের জন্য এটা চরম ও পরম সম্মান ও সৌভাগ্যের ব্যাপার। যে ঘরে ইয়াতিমের সঙ্গে সদাচরণ করা হয়, মুসলমানের ঘরের মধ্যে সেই ঘর সর্বোত্তম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পিতা-মাতা মুসলমান এমন এক ইয়াতিমকে সামর্থ্যবান হওয়া পর্যন্ত নিজের পানাহারে শামিল করবে, নিশ্চিতরূপে তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ আত-তারগিব ওয়াত তারহিব।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ওমর গনি এমইএস ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম; খতিব, হজরত ওসমান (রা.) জামে মসজিদ, হালিশহর এ ব্লক, চট্টগ্রাম।

সর্বশেষ খবর