বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসলামে নারীদের অসামান্য অবদান

যুবায়ের আহমাদ

ইসলামে নারীদের অসামান্য অবদান

ইসলাম শান্তিকামী মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। ইসলামের সুমহান বাণী পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিতে, অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অনেক অবদান রেখেছেন। ইসলামের জন্য আর্থিক অনুদান, হাদিস বর্ণনা, ইসলামী জ্ঞান প্রসার সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক নারীরা অবদান রেখেছেন।

ইসলামের জন্য নারীর অবদান রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ওহি নাজিলের আগেই শুরু হয়। নবুয়ত প্রাপ্তির আগে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা গুহায় দীর্ঘ ধ্যান ও ইবাদতের মগ্ন থাকতেন। হেরা গুহায় যাওয়ার সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাবার প্রস্তুত করে দিতেন খাদিজা (রা.)। খাবার শেষ হলে আবার তিনি খাদিজার কাছে এসে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আবার ফিরে যেতেন। সে সময় হজরত খাদিজাও (রা.) রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য খাবার নিয়ে হেরা গুহায় যেতেন। মক্কা থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে হেঁটে গিয়ে ৮৯০ ফুট উঁচু সে গুহায় উঠে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন একজন নারী! এভাবেই ইসলামের গোড়ায় অবদান রেখেছেন একজন নারী।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর প্রথম ওহি নাজিল হলে ওহি নাজিলে দৃশ্য, জিব্রাইলের দৃঢ় আলিঙ্গন ও বিশাল দায়িত্বে ভারাক্রান্ত হয়ে তিনি কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরেছিলেন। হজরত খাদিজা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অভয় দিয়ে তার মনোবল দৃঢ় করে দিলেন। তিনি বললেন, ‘না, তা কখনো হতে পারে না। আল্লাহর কসম, তিনি আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়কারী, গরিব-দুঃখীর সাহায্যকারী, অতিথিপরায়ণ ও মানুষের বিপদে সাহায্যকারী।’ তিনিই প্রথম রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নিঃসংকোচে ইমান আনেন। এভাবে প্রথম ইমান আনার গৌরবও অর্জন করেন একজন নারী। ইসলামের জন্য তার সব সম্পত্তি দান করে দিলেন হজরত খাদিজা। ইসলামের দাওয়াত প্রদানের কারণে মুশরিকরা যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে অমার্জিত আচরণ করত, তখন হজরত খাদিজা সে আচরণগুলোকে হালকা ও তুচ্ছভাবে তুলে ধরে নবীজীকে সাহস দিতেন। সে কালের ধনাঢ্য খাদিজা শিয়াবে আবু তালিবে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সে কষ্ট হাসিমুখে মেনে নেন। শুধু তাই নয়, তিনি ইসলামের জন্য অবরুদ্ধ বনু হাশিমের জন্য বিভিন্ন কৌশলে কিছু কিছু খাবার আনার ব্যবস্থা করতেন। ইসলামের জন্য এই মহীয়সী নারীর অসামান্য ত্যাগ আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে সালাম জানিয়েছেন এবং তাঁর জন্য জান্নাতে মণি-মুক্তার তৈরি প্রাসাদের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরিল এসে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ, এই তো খাদিজা আপনার কাছে একটা পাত্র নিয়ে আসছেন যাতে কিছু তরকারি, খাদ্য বা পানীয় রয়েছে। তিনি এলে তার প্রতিপালকের ও আমার পক্ষ থেকে সালাম দেবেন। আর তাঁকে জান্নাতে একটি ঘরের সুসংবাদ দেবেন, যা মুক্তা দিয়ে তৈরি, যার ভিতরে খোলা ও তাতে কোনো হৈ চৈ নেই।’ বুখারি।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার (আ. গনি রোড), গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর