মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেয়ামতের দিন খুনের বিচার হবে সবার আগে

মাওলানা উবায়দুল হক সালেহী

কেয়ামতের দিন খুনের বিচার হবে সবার আগে

আরবি ‘জিহাদ’ শব্দটি এসেছে জাহাদা-ইয়াজহাদু ওজনে বাবে ফাতাহা-ইয়াহতাহু থেকে। আরবি ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, জিহাদ শব্দটির অর্থ হলো- কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সফলতা লাভের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। কোনো শিক্ষার্থী যখন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য কোমর বেঁধে পড়াশোনা করে তখন আরবি ভাষায় বলা হয় ‘হুয়া ইয়াজহাদু লি আফলাহাল ইমতিহান।’ অর্থাৎ ‘সে পরীক্ষায় সফলতা লাভের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’

জিহাদ শব্দের আরেকটি অর্থ হলো কষ্ট স্বীকার করা। রাতে ঘুম থেকে ওঠা খুব কষ্টকর। তাই ঘুম থেকে উঠে যে নামাজ পড়া হয় তার নাম দেওয়া হয়েছে সালাতুত তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ শব্দের মূলে আছে জিহাদ শব্দটি। জিহাদ শব্দের তৃতীয় অর্থটি হলো শত্রুর মোকাবিলায় সাধ্যমতো সংগ্রাম করা। আল কোরআনে এ অর্থে জিহাদ শব্দটির ব্যবহার পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ে সন্ত্রাস-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন এও এক প্রকার জিহাদ। জিহাদের সংজ্ঞায় বুখারির বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, জিহাদ শব্দটির দুই ধরনের অর্থ হয়। একটি হলো আম তথা ব্যাপক অর্থ। আরেকটি হলো খাস তথা বিশেষ অর্থ। ব্যাপক অর্থে নিজের প্রবৃত্তি, শয়তান ও প্রতিটি পাপের সঙ্গে ভিতরে-বাইরে সংগ্রাম করাকে জিহাদ বলে। এজন্য পড়াশোনা করা, ইবাদত-বন্দেগিতে লেগে থাকা, হারাম ছেড়ে হালাল উপার্জন করা, মিথ্যা ছেড়ে সত্য বলা এ সবই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত।

জিহাদের বিশেষ অর্থটি হলো আল্লাহদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করা। আর এটা অবশ্যই নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ও নির্দিষ্ট পরিস্থিতির আলোকে হয়ে থাকে। চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখানেই ভুলটা করে। তারা জিহাদের এই বিশেষ অর্থটিকে সাধারণ অর্থে নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে থাকে। আর একে ইসলামের মোড়কে বৈধতা দিতে চায়। অথচ কোরআন স্পষ্ট করে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাসকে ঘোরতর অপরাধ বলে চিহ্নিত করেছে।

আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে একজন মানুষকেও হত্যা করবে সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করল।’ সূরা মায়েদা, আয়াত ৩২। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, পুরো পৃথিবীর মানুষ মিলেও একজন মানুষের প্রাণ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাই অন্যায়ভাবে একজন মানুষ হত্যা করা আসলে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করারই নামান্তর। সূরা ফোরকানের ৬৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘প্রতিটি প্রাণই সুমহান মর্যাদাম-িত। কোনো প্রাণকে হত্যা কোরো না এবং ব্যভিচার কোরো না। যে এমনটি করবে তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জিহাদ শব্দটির ব্যাপক অর্থ বাদ দিয়ে এর সংকীর্ণ অর্থটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে একদল মানুষ জিহাদ বলতেই হত্যাকা- কিংবা সন্ত্রাস বুঝে থাকে। এটি আসলে ইসলামের ওপর এক ধরনের অপবাদ ছাড়া কিছু নয়। অথচ আল কোরআন ও হাদিসে হাজারো উদ্ধৃতি রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, মানুষ হত্যা ভয়াবহতম অপরাধের মধ্যে অন্যতম একটি অপরাধ।

লেখক : সুপার, নন্দীপাড়া সোনার মদিনা হাফেজিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খিলগাঁও, ঢাকা।

 

সর্বশেষ খবর