বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুমিনের অন্যতম গুণ আমানতদারিতা

মাওলানা আবদুস সোবহান বিক্রমপুরী

মুমিনের অন্যতম গুণ আমানতদারিতা

আরবি ‘আমানত’ শব্দের অর্থ গচ্ছিত রাখা, নিরাপদ রাখা। পরিভাষায়, কারও কাছে কোনো অর্থসম্পদ,

বস্তুসামগ্রী গচ্ছিত রাখাকে আমানত বলা হয়। যিনি গচ্ছিত বস্তুকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে সংরক্ষণ করেন, যথাযথভাবে হেফাজত করেন এবং মালিক চাওয়ামাত্রই কোনো টালবাহানা ছাড়া ফেরত দেন তাকে আল-আমিন তথা বিশ্বস্ত-সত্যবাদী আমানতদার বলা হয়। আমানতের প্রচলন জীবনের সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি স্তরে প্রতিটি বিষয়ে আমানত রক্ষা করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লেনদেনের আমানত, কথার আমানত- যেসব বিষয় প্রকাশ হলে বা যেসব কথা বললে পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, মনোমালিন্য ও সংঘাত সৃষ্টি হবে, এমন বিষয় প্রকাশ না করা এবং না বলাও আমানত। সব ক্ষেত্রে আমানত রক্ষা করা একজন মুমিনের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমানতদারিতাকে আল্লাহতায়ালা মুমিনের অন্যতম গুণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এরা সেই লোক যারা আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ সূরা আল মুমিনুন, আয়াত ৮। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যেন আমানত তার মালিককে যথাযথভাবে প্রত্যর্পণ কর।’ সূরা নিসা, আয়াত ৫৮।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য হাদিসে আমানতদারিতার মহৎগুণকে ইমানের আলামত বলেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার আমানতদারিতা নেই তার ইমান নেই, আর যে ওয়াদা পালন করে না, তার মধ্যে দীন নেই।’ বায়হাকি। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতা রক্ষা না করা, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কথায় কথায় মিথ্যাচার করা ইত্যাদি গর্হিত আচরণকে মোনাফেকির নিদর্শন বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মোনাফেকের নিদর্শন তিনটি। কথা বললে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, যখন তার কাছে কোনো বস্তু আমানত রাখা হয়, তা খেয়ানত করে।’ বুখারি। এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, যারা মোনাফেক, তারা আমানত রক্ষার প্রতি যত্নশীল থাকে না। হকদারের প্রাপ্য তাকে প্রত্যর্পণ করে না। হয় নিজে আত্মসাৎ করে অথবা অপব্যবহারের মাধ্যমে তা নষ্ট করে।

হকদারের প্রাপ্যও আমানতের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী হকদারের যে কোনো হক আমাদের ওপর রয়েছে তা আদায় করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। এসব হকের মধ্যে রয়েছে আল্লাহর হক, বান্দার হক। বান্দার হকের মধ্যে আবার কিছু আছে দীনসংক্রান্ত। আর কিছু দুনিয়াবিবিষয়ক। কিছু আত্মীয়স্বজন সম্পর্কিত। কিছু অন্যের সঙ্গে জড়িত। আবার কিছু আছে বড়দের হক, কিছু ছোটদের ও কিছু সমকক্ষদের হক। আমাদের অনেকের অবগতি না থাকা অথবা অমনোযোগিতা ও উদাসীনতার কারণে অনেকে এসব হক আদায়ের প্রতি যথাযথ যত্নশীল থাকি না। ফলে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার কারণে পরকালে তো তার শাস্তির সম্মুখীন হতেই হবে, এ ছাড়া দুনিয়ায়ও নানারকম জটিলতা ও সমস্যা, ফেতনা-ফ্যাসাদ, অরাজকতা-অশান্তি প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে এবং হতেই থাকবে। তাই এসব হকের ব্যাপারে সচেতন ও হক আদায়ে যত্নশীল হওয়ার জন্য এ সম্পর্কে অবগতি লাভ করা সবার জন্য আবশ্যক। বিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের ইলমি মজলিসে বসে এসব বিষয় জেনে নিতে হবে।

কোরআন-সুন্নাহর আমলের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত আমানতদার হিসেবে কবুল করুন।

লেখক : খতিব, উঁচাবাড়ী বাইতুস সুজুদ জামে মসজিদ পোস্তগোলা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর