শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তথ্য সবার অধিকার : থাকবে না কেউ পেছনে আর

মরতুজা আহমদ

মানুষের তথ্য জানার ধারণাটি মানবসভ্যতার ঊষাকাল থেকেই পৃথিবীতে বিরাজমান। তবে তথ্য জানার অধিকার বা তথ্যে প্রবেশাধিকার অর্জন হয়েছে অনেক বিবর্তনের মাধ্যমে। ১৯৬৬ সালে সুইডেনে প্রথম তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আইন প্রণীত হয় এবং সে দেশে জনগণের তথ্যপ্রাপ্তির আইনি ভিত্তি রচিত হয়। তারও অনেক পর ২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় বিশ্বব্যাপী মানুষের তথ্য অধিকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব সংগঠন একত্রিত হয়ে FOI (Freedom of Information) Network গঠন করে। নেটওয়ার্কের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয়, বিশ্বের সব দেশ ২৮ সেপ্টেম্বর নিজ নিজ পরিমন্ডলে তথ্য অধিকার বিষয়ে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও সাফল্যগাথা প্রচার করবে যাতে সব মানুষের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয়, স্ব স্ব দেশে প্রয়োজনীয় আইন, নীতিমালা, কাঠামো তৈরি হয় এবং এজন্য বাস্তবিক অর্থে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশেষে ইউনেস্কো তার ৩৮ সি/৫৭ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে প্রতি বছর ২৮ সেপ্টেম্বর International Day for Universal Access to Information-IDUAI হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। ইউনেস্কো IPDC-Gi তত্ত্বাবধানে ২০১৬ সাল থেকে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পুরোপুরিভাবে জাতিসংঘের এজেন্ডা ২০৩০-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-এসডিজি অনুযায়ী এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহ সংকল্পবদ্ধ। সব অভীষ্টের প্রতিটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেই তথ্য অধিকার আইন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে ১৬.১০ লক্ষ্যমাত্রাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যক্ষভাবে প্রাসঙ্গিক। ‘জাতীয় আইন ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী জনসাধারণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা ও মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষাদান।’ এ লক্ষ্যমাত্রার কর্মসম্পাদন পরিমাপকল্পে প্রস্তাবিত বৈশ্বিক সূচক (১৬.১০.২) হলো ‘জনসাধারণের তথ্যে অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক এবং/অথবা নিশ্চয়তামূলক নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নকারী দেশের সংখ্যা। সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে এসডিজি এমন একটি কর্মপরিকল্পনা যা বিশ্বশান্তি জোরদার করবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে জনগণের সব ধরনের ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের অবসান ঘটাবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার গুরুদায়িত্ব পালন করাসহ জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলার কাজ এগিয়ে নেওয়া যাবে। আর এসব কর্মকান্ডের মূলমন্ত্র হবে ‘কাউকে পেছনে রেখে নয় (No one will be left behind)’ নীতি অনুসরণ। এ মূলমন্ত্রের বাস্তবায়ন সম্ভব তথ্যে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে। এখানেই এবারের দিবস পালনে আমাদের মূল প্রতিপাদ্যের মাহাত্ম্য।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলবৃদ্ধ, অসহায়, হতদরিদ্র, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষুধা ও দারিদ্র্য নির্মূল করে তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা, সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সুশাসন ও গণতন্ত্র সুুসংহতকরণ, টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রচলন, সবার জন্য ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণে এগুলোই টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট।

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর মূল লক্ষ্য হলো, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণ। জনগণ রাষ্ট্রের সব কর্তৃপক্ষের ওপর এ আইন প্রয়োগ করে। কর্তৃপক্ষের কর্মকা-ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে এবং দুর্নীতি হ্রাসের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে সংবিধানে বর্ণিত অন্যতম মৌলিক অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃত জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণে আইনটি প্রণীত হয়েছে।

আইনের ৪ ধারা হলো : Subject to the provisions of this Act, every citizen shall have the right to information from the authority, and the authority shall, on demand from a citizen, be bound to provide him with the information.

আইনের ৫ ধারায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সব কর্তৃপক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইনের ৬ ধারামতে সব কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে তথ্য সহজলভ্য করে প্রকাশ ও প্রচার করবে।

আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্দ্রিয়-প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সব সহায়তা প্রদান করবেন।

এই অনুচ্ছেদসমূহের মাধ্যমে : সব নাগরিকের তথ্যপ্রাপ্তির আবশ্যিক আইনি ভিত্তি রচিত হয়েছে। সব নাগরিকের সব তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রচার, প্রকাশে আইনি বাধ্যবাধকতা আরোপিত হয়েছে, ব্যর্থতায় শাস্তির বিধান রয়েছে, তথ্য প্রদানে সুনির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি হয়েছে।

সব তথ্য সবার জন্য বিশেষত যেগুলো নাগরিকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার অর্জনে সহায়ক যেগুলোর অভাবে এ অধিকারগুলো অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হয় সেগুলো অর্জনের পথ সুগম হয়েছে।

ধনী-দরিদ্র, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, স্থাননির্বিশেষে সবার জন্য তথ্য অধিকার আইনটিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সর্বজনীন করে তুলেছে; যা এসডিজির মূল যে কথা None to be left behind তত্ত্বের বাস্তব রূপদানের একটি ব্লু-প্রিন্ট যা এসডিজি বাস্তবায়নের অন্যতম কৌশল হিসেবে কাজ করবে। সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্য ও ক্ষুধার অবসান, সব বয়সী ও সব মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা, সব নারী ও মেয়ের ক্ষমতায়ন, সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন, সবার জন্য জ্বালানি সহজলভ্যকরণ, সবার জন্য কর্মসংস্থান, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা, সবার জন্য ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির পথ সুগম করা, সর্বস্তরে কার্যকর জবাবদিহিপূর্ণ অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ বিশেষভাবে কার্যকর হবে। আইনের প্রয়োগ ও চর্চা যত বেশি হবে তথ্যে সবার প্রবেশাধিকার তত বেশি নিশ্চিত হবে, তথ্য সহজলভ্য হবে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সর্বাগ্রে জনগণের তথ্যে অভিগম্যতা (Access of people to information)|। শহর, গ্রাম, বস্তি, হাওর, পাহাড়, উপকূল নির্বিশেষে সর্বত্রই, সব ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণির নিরাপত্তা সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ এবং সর্বত্র অসমতা, বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসানকল্পে তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ ও অনুশীলন হবে একটি বিশেষ হাতিয়ার। উভয়ের লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।

কাউকে পেছনে ফেলে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের কোনোটির অর্জনই সম্ভব নয়, আর এজন্য প্রয়োজন তথ্যে সবার অভিগমনের নিশ্চয়তা। উদাহরণস্বরূপ অভীষ্ট ১ ও ২ যথাক্রমে No Poverty & Zero hunger. জনগণের সর্বত্র সব ধরনের ও মাত্রার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের সম্পূর্ণ অবসান এবং মর্যাদা ও সমতা নিশ্চিত করা। এটি অর্জনের জন্য কোথায় কী ধরনের ও মাত্রার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য রয়েছে, তাদের মর্যাদা ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য কী ধরনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে সেগুলো অত্যন্ত নিবিড়ভাবে শনাক্ত করে, কী প্রক্রিয়ায় কার দ্বারা এগুলোর উন্নয়ন ঘটানো যাবে এবং সেজন্য গৃহীত ব্যবস্থাদি সম্পর্কে সব তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও সব উপকারভোগীর কাছে প্রচার, প্রকাশ, প্রদান ও অংশীদার করা অর্থাৎ এসব তথ্যভান্ডার তৈরি ও এতে সাধারণ মানুষের অভিগমনে সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অনেকটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে সব মানুষের জন্য সর্বত্র তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে এ পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব। এ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার, গণমাধ্যম ও সুশীলসমাজ প্রতিষ্ঠানসমূহ শক্তিশালী হবে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে মনিটর করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকের সেবাদানের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হবে, একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, গণতন্ত্র সুসংহত হবে, দিবসের মূল প্রতিপাদ্যের সার্থক রূপায়ণ হবে, যা টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংবিধানের কতিপয় অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে।

যেমন : অনুচ্ছেদ ১৯মতে, সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন। মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।

জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।

সংবিধানে অনুচ্ছেদ ১৫মতে (ক) অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা। (খ) কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার অধিকার। (গ) সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার।

সব মানুষের সুযোগের সমতা, সম্পদের সুষম বণ্টন, সব মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ, প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার প্রদান প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দ্বারা নিশ্চিতকরণে তথ্য অধিকার আইন হতে পারে চাবিকাঠি। তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর/অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থার গৃহীত সেবা, সম্পদ ও নিরাপত্তা বেষ্টনীতে জনগণের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিতকরণে এবং এগুলো এভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন গৃহীত কার্যক্রম ও সুবিধাদি সম্পর্কে উপকারভোগীদের তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে তাদের aware, educate, motivate I sensitize করা। কারণ তারা সব উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে অবস্থান করে। বলা হয় Information is power and right to information is the right of all other rights. . এজন্য প্রয়োজন তথ্যের অবাধ প্রবাহ সৃষ্টি করা।

সমাজের অতিদরিদ্র, পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, তৃণমূল, প্রান্তিক জনগণ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী, অসুস্থ, বিধবা, বৃদ্ধ, চরম দারিদ্র্যপীড়িত, ভাসমান জনগণ, ঝুঁকিপূর্ণ মহিলা, শিশু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী- যাদের অনেকেই তাদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়, যাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাপক কার্যক্রম ও নিরাপত্তা বেষ্টনী রয়েছে প্রকৃতপক্ষে তাদের এ সুবিধা গ্রহণের মতো জ্ঞান, যোগ্যতা, দক্ষতা বা সুযোগ নিতান্তই কম, তাদের ইন্টারনেটে অভিগম্যতা অত্যন্ত সুকঠিন অথচ তারাই মূলত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের মূল stakeholder. সমাজের কাউকে বাদ দিয়ে নয় বলতে এই জনগোষ্ঠীই এই মহাযজ্ঞের মূল অংশীদার। এসডিজির সব লক্ষ্যমাত্রাই অন্তর্ভুক্তিমূলক, এখানেই এসডিজি বাস্তবায়নের মূল চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্যই তথ্য অধিকার আইনের ব্যাপক প্রয়োগ জরুরি। এর যত চর্চা হবে, তথ্যে সবার অধিকার তত নিশ্চিত হবে, ‘থাকবে না কেউ পেছনে আর’ তখন শুধু কথার কথা থাকবে না, এ তত্ত্ব পাবে বাস্তবতা, হবে অর্থপূর্ণ। প্রতিটি নাগরিক কর্তৃক তার তথ্য অধিকার প্রয়োগ ও ব্যবহার করাটা হবে জরুরি। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে যেমন Whole of the society approach গ্রহণ করা হয়েছে, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নে একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যই হলো সবার তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করে সবার জীবনমান উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, কাউকে পেছনে ফেলে বা কোনো জনগোষ্ঠীকে অবহেলায়, অনাদরে যার অর্জন হবে সুদূরপরাহত। তাই শুধু তথ্য অধিকার দিবস পালনের মূল প্রতিপাদ্য নয়, সদাসর্বদা আমাদের সবার কর্মের/সেবার মূলমন্ত্র হবে ‘তথ্য সবার অধিকার : থাকবে না কেউ পেছনে আর’।

লেখক : প্রধান তথ্য কমিশনার।

সর্বশেষ খবর