শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে রসুলুল্লাহর শিক্ষা

মুফতি মুহিউদ্দিন কাসেম : পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব : বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

জুলুম, নির্যাতন সবার ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায় হারাম। জুলুম, নির্যাতন ইসলাম সমর্থন করে না। সমাজের সব ক্ষেত্রে সবার জন্য ন্যায়-নিষ্ঠা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা এবং জুলুম-নির্যাতনের অন্ধকার থেকে সমাজকে মুক্ত রাখাই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা। জুলুম-নির্যাতনের পরিণতি ও ভয়াবহতা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তুমি কখনো এমন মনে কোরো না যে, জুলুমকারীরা যা করছে আল্লাহ সে বিষয়ে উদাসীন। তিনি তাদের সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে যাচ্ছেন যেই দিন তাদের চোখ আতঙ্কে স্থির দাঁড়িয়ে যাবে। তারা ভীতবিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চোখ রেখে ছোটাছুটি করতে থাকবে। আতঙ্কে তাদের দৃষ্টি নিজেদের দিকেও ফিরবে না, তাদের অন্তর থাকবে উদাস।’ সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৪২।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের ওপর অত্যাচার ও জোরজুলুম চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করে বেড়ায়; তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ সূরা শুরা, আয়াত ৪২।

জুলুমের ভয়াবহতা বর্ণনা করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘জুলুমের পরিণতি হলো কেয়ামত দিবসের ঘোর অন্ধকার।’ মুসলিম, তিরমিজি।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! জোরজুলুম করাকে আমি আমার ওপর হারাম করেছি এবং একে আমি তোমাদের মধ্যে হারাম ঘোষণা করছি। কাজেই তোমরা একে অন্যের প্রতি জুলুম করবে না।’ মুসলিম, তিরমিজি।

তিনি আরও বলেছেন, ‘কেয়ামত দিবসে সব পাওনাদারের প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে। এমনকি শিংবিহীন বকরির ক্ষতিপূরণ শিংওয়ালা বকরি থেকে আদায় করা হবে।’ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ।

জুলুম-নির্যাতন সবার ক্ষেত্রেই হারাম বিশেষ করে নারী ও শিশুদের প্রতি কোনোভাবেই যাতে জুলুম না হয় এ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নারীর প্রতি ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর।’ সূরা নিসা, আয়াত ১৯।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সাবধান! তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচার রক্ষা করে চলবে। কারণ তারা তোমাদের কাছে বন্দীর মতো আবদ্ধ থাকে। তারা তোমাদের সুষ্ঠু অবাধ্যতা অবলম্বনের আগে তাদের ওপর কঠোরতা আরোপের কোনো অধিকার তোমাদের নেই।’ তিরমিজি, ইবনে মাজাহ।

তিনি আরও ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদের মধ্যে ইমানের দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা পূর্ণতার অধিকারী হলো সেই ব্যক্তি যে তাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর চরিত্রের অধিকারী এবং যে নিজ স্ত্রীর সঙ্গে সবার তুলনায় অধিকতর কোমল আচরণকারী।’ তিরমিজি, মুসনাদে হাকিম।

শিশুদের প্রতি ভালো ব্যবহারের গুরুত্বারোপ করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না সে আমার উম্মত নয়।’ আবু দাউদ, তিরমিজি।

উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো জুলুম-নির্যাতন সবার ক্ষেত্রেই হারাম বিশেষ করে নারী-শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্জনীয়। অথচ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় একশ্রেণির মানুষ আছে যারা মানুষের ওপর জুলুম করে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের প্রতি তাদের জুলুমের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। কথায় কথায় স্ত্রীদের গালমন্দ করে এমনকি তাদের গায়ে হাত ওঠাতেও দ্বিধা করে না। এসব গন্ড মূর্খের স্মরণ করা উচিত, সব ক্ষমতা ও শক্তির উৎস একমাত্র আল্লাহ। সুতরাং তাঁর দেওয়া শক্তি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যদি নারী-শিশুদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন করা হয় তাহলে আল্লাহ-প্রদত্ত এই শক্তি, ক্ষমতা আল্লাহ ছিনিয়ে নিয়ে দুনিয়াতেই আল্লাহ অপমানিত করতে পারেন। আর পরকালের ভয়াবহ শাস্তি তো আছেই।

সুতরাং আসুন আমরা আল্লাহকে ভয় করি। সব ধরনের গুনাহ বর্জন করি। জুলুম-নির্যাতন পরিহার করি। নারী ও শিশুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি, তাদের প্রতি সদয় হই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর