রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হারাম খাদ্যে পরিপুষ্ট দেহ জান্নাতে যাবে না

মাওলানা মুহাম্মদ আশরাফ আলী

অসৎ ভাবে অর্থ উপার্জন ইসলামে নিষিদ্ধ। অন্যকে প্রতারণা করে, ঘুষ অথবা চৌর্যব"ত্তির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন বা সেই অর্থে খাবার গ্রহণ ইসলামী দ"ষ্টিতে পুরোপুরি হারাম। হজরত কাব ইবনুল উজরাহ (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট, তা জান্নাতে যাবে না।’ তিরমিজি। হজরত জায়েদ বিন আরকাম (রা.) বর্ণনা করেন, ‘হজরত আবুবকর (রা.)-এর এক ক্রীতদাস ছিল। সে আবুবকর (রা.)-এর সঙ্গে কিছু অর্থের বিনিময়ে মুক্তির চুক্তিপত্র করে। অতঃপর সে যখন প্রতিদিন মুক্তিপণের কিছু অর্থ নিয়ে আসত, তখন হজরত আবুবকর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করতেন, এ অর্থ কীভাবে সংগ্রহ করেছ? যদি সে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারত, তবেই তিনি তা গ্রহণ ও ব্যবহার করতেন, অন্যথায় তা গ্রহণ করতেন না। এক রাতে সে হজরত আবুবকর (রা.)-এর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সেদিন তিনি রোজা রেখেছিলেন, তাই সেই খাবার সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ভুলে যান। তিনি অসচেতনভাবে তা থেকে এক লোকমা খেয়ে ফেলেন। এরপর মনে হওয়ামাত্র তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এ খাবার তুমি কীভাবে উপার্জন করেছ? ক্রীতদাসটি বলল : জাহেলিয়ার আমলে আমি মানুষের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভালো গণক ছিলাম না, তাই মানুষকে শুধু ধোঁকা দিতাম। এ খাবার সেই ধোঁকার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংগ"হীত। হজরত আবুবকর (রা.) বললেন, সর্বনাশ! তুমি আমায় এ কী করেছ! অতঃপর তিনি গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করার চেষ্টা করলেন কিন্তু' সেই খাবারের কিছুই বের হচ্ছিল না। তাকে বলা হলো, পানি না খেলে ওই খাদ্য বেরোবে না। তিনি পানি আনালেন এবং পানি পান করে ই"ছাকৃত বমির মাধ্যমে পেটের সব খাবার বের করে দিলেন। লোকেরা বলল, আল্লাহ আপনার ওপর অনুগ্রহ কর"ন। মাত্র এক লোকমা খাবারের জন্য আপনি এত অস্থির হলেন? হজরত আবুবকর (রা.) বললেন, ওই খাবার বের করতে গিয়ে যদি আমার মারা যাওয়ারও ভয় থাকত, তবু আমি ম"ত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও তা বের করে ছাড়তাম । কেননা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, যে শরীর হারাম খাদ্য নিয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়, জাহান্নামই তার জন্য শ্রেয় ¯'ান। তাই আমি ভয় পেয়ে যাই, এই এক লোকমা হারাম খাবার দিয়ে আমার শরীর অš-ত কিছুটা হৃষ্টপুষ্ট হতে পারে।’ বুখারি। ওলামায়ে কিরামদের অভিমত, জোর করে অর্থসম্পদ আদায় করা, আমানত আত্মসাৎ, প্রবঞ্চনা, চুরি, জালিয়াতি, সুদ, ঋণের অর্থ অস্বীকার, অসত্য স্যা দেওয়া, এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ, ঘুষ লেনদেন, ওজনে কমবেশি করা, উল্লেখ না করে দোষযুক্ত পণ্য বিক্রি করা, জুয়া, লটারি, বাণ-জাদুটোনা, ভাগ্য গণনা, যথার্থ মূল্য গোপন করে অধিক মূল্য উল্লেখ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করা, অর্থের বিনিময়ে ক্রেতাকে পণ্যের খোঁজ দেওয়া, স্বাধীন মানুষকে দাসরূপে বিক্রি, মদ ও শূকর এবং অন্য নিষিদ্ধ জিনিস বিক্রয়লব্ধ সম্পদ সব হারাম বা নিষিদ্ধ খাদ্যের শামিল। আল্লাহ আমাদের অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন এবং তার মাধ্যমে হারাম খাবার খাওয়ার দুর্ভাগ্য থেকে রা কর"ন।

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর