সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের ভূত তাড়াবে কে?

অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা

মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের ভূত তাড়াবে কে?

ডাকসু নির্বাচন ও রোকেয়া হল নিয়ে একটি বিশাল ষড়যন্ত্র হয়েছিল এ বছরের মার্চ মাসে। ডাকসু নির্বচনের সময় যারা রোকেয়া হলকে কুয়েতমৈত্রী হল বানানোর চেষ্টা করেছিল, রোকেয়া হলের সব কর্মচারী, কর্মকর্তা, আবসিক শিক্ষকবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আমি সে ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে সমর্থ হই। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেল ও নিয়োগকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে নতুন ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের একটি অন্যতম টার্গেট হচ্ছে রোকেয়া হল। ডাকসু নির্বাচনের পর রোকেয়া হল নিয়ে এখন শুরু হয়েছে Talk Show I facebook-এর মাধ্যমে ষড়যন্ত্র। অপপ্রচার করা হচ্ছে রোকেয়া হলে ২১ লাখ টাকার নিয়োগবাণিজ্য হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনটি অডিও ক্লিপ ছাড়া হলো। যদি অডিও ক্লিপগুলো ভালোভাবে শোনা যায় তাহালে দেখা যাবে রোকেয়া হলের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শাহীন রানা ও রোকেয়া হল সংসদের এজিএস ফাল্গুনীর সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে। শাহীন রানার পুরো অডিওতে শুধু ‘আনিস’ ও ‘পারভেজ’-এর নাম সোর্স হিসেবে উল্লেখ করছে, কিন্তু নিয়োগবাণিজ্যের কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। কোথায়, কখন, কীভাবে ২১ লাখ টাকার মতো এত বড় টাকার নিয়োগবাণিজ্য হয়েছে তার কোনো প্রমাণ সে দিতে পারেনি। সে শুধু শুনেছে, বলে অভিমত প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, এ আনিস ও পারভেজ ক্যান্টিন বয় হিসেবে রোকেয়া হলে কাজ করেছে। কিন্তু দুই মাস আগে এ পারভেজ ও আনিস কাজ ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ যে দুজনের কাছ থেকে শাহীন রানা ২১ লাখ টাকার কথা শুনেছে, সে দুজনেরই কেউই এখন রোকেয়া হলে কাজ করছে না। এটি আশ্চর্যজনক যে রোকেয় হলে কর্মরত কর্মচারীদের বাদ দিয়ে শাহীন রানা এমন দুজনের নাম ব্যবহার করলেন যাদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। মিথ্যা কথা বলতে বলতে কীভাবে তা লেজে গোবরে প্যাঁচিয়ে যায়, এটিই বোধকরি তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। মূলত, ০১/০৯/২০১৯ তারিখে রোকেয়া হলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগের লক্ষ্যে সিলেকশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ছয় সদস্য উপস্থিত ছিলেন। রোকেয়া হল প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আমি এ সিলেকশন বোর্ড কখনই স্থগিত ঘোষণা করিনি। এই সিলেকশন বোর্ড ছিল মূলত মাস্টাররোলে যে সব কর্মচারী বর্তমানে রোকেয়া হলে কর্মরত আছে তাদের স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে। যে কোনো প্রতিষ্ঠানই স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। রোকেয়া হলে যে সব কর্মচারী মাস্টার রোলে কর্মরত আছে, তাদের মধ্য থেকেই স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এ সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে। অর্থাৎ এখানে বাইরে থেকে কোনো নতুন কর্মচারী নিয়োগের কোনো সুযোগই ছিল না মূলত যে কয়টি পদ (৮টি) বিজ্ঞাপিত হয়েছে, তার চেয়ে রোকেয়া হলে মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। যেখানে তাদের সবাইকে স্থায়ীকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না, পদের অভাবে, সেখানে বহিরাগত প্রার্থীদের নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ এ বহিরাগত প্রার্থীদের নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এবার ২১ লাখ টাকার লেনদেন সম্পর্কে Facebook-এ যে তথ্য ছাপা হয়েছে তাতে কী পরিমাণ গরমিল আছে সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক : কামালউদ্দিন নামে একজন কর্মচারীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কামালউদ্দিন নামে রোকেয়া হলে কোনো কর্মচারী নেই। বলা হয়েছে বাগানমালী পদের জন্য বাবুল চৌহানের ছেলে পাঁচ লাখ টাকা ও কামরুজ্জামান সুমন নামে আরেক ব্যক্তি ৮ লাখ টাকা দিয়েছে। Facebook-এর বক্তব্য অনুযায়ী হল সংসদের ভিপি ও জিএস কায়েমউদ্দিনের ছেলে সুমনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা ও বাবুল চৌহানের ছেলের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি নিশ্চিত করেছে। এটি কী করে সম্ভব? এই দুজনই বাগানমালী পদে প্রার্থী ছিল। বাস্তবে বাগানমালীর জন্য একটি পদই বিজ্ঞাপিত হয়েছে। তাহলে একটি বাগানমালীর পদের জন্য দুজন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদেরকে চাকরি দেওয়া হবে কীভাবে? তদুপরি বলা হয়েছে আলমগীর নামে একজন ৮ লাখ টাকার বিনিময়ে নিরাপত্তা প্রহরীতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ০১/০৯/২০১৯ তারিখে প্রার্থীদের উপস্থিতির তালিকা থেকে দেখা যায় আলমগীর নামে কোনো প্রার্থী নিরাপত্তা প্রহরীতে আবেদনই করেননি। বারবার প্রচার করা হয়েছে, এসব দুর্নীতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, রোকেয়া হল প্রভোস্টের তত্ত্বাবধানে। এটি যে কত বড় মিথ্যাচার তা যে Facebook থেকে এটি অপপ্রচার চালানো হয়েছে সেটি নিজেই তার প্রমাণ দিয়েছে। কারণ ০১/০৯/২০১৯ তারিখে যে সিলেকশন বোর্ড বসেছিল সে বোর্ডের সদস্য হিসেবে কারা কারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের সকলের পরিচিতি উক্ত Facebook এই তুলে ধরা হয়। এ বোর্ডে আছেন হল প্রভোস্ট ও দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দুজন ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং চতুর্থ শ্রেণির দুজন প্রতিনিধি। সুতরাং, রোকেয়া হলের নিয়োগবাণিজ্য সম্পূর্ণভবে হল প্রভোস্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে-সিলেকশন কমিটি সদস্যদের সংখ্যা ও নাম প্রকাশের মাধ্যমেই এ মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়েছে। অনেকে বলেছেন তাহলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো কেন ও নিয়োগ স্থগিত রাখাই বা হল কেন? এটি করা হয়েছে বস্তুত মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যকে প্রতিষ্ঠার জন্য। যেভাবে প্রতিদিন Facebook-এ নিয়োগ নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে কোনো প্রমাণ ছাড়াই, ঠিক একইভাবে আমাদের কোনো কোনো সাংবাদিকও কোনো অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাড়াই ২১ লাখ টাকার নিয়োগবাণিজ্য হয়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর ছাপিয়েছেন। শুধু সাংবাদিকবৃন্দই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষকও কোনো প্রমাণ ছাড়াই রোকেয়া হলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ডাকসু নির্বাচনের সময় ড. তানজীম, ড. কাবেরী গায়েন, ড. সামিনা লুৎফা, ড. নেহাল করিমসহ আরও অনেকই পত্রিকায় কলাম লিখে বসলেন এই শিরোনামে ‘শিক্ষকরা যখন পরাজিত হয়’। আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ বিপরীত। শিক্ষকরা কখনই পরাজিত হয় না। শিক্ষকরা পরাজিত হলে সমাজ, সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। একজন ব্যক্তি শিক্ষক বা উপাচার্য হতে পারেন, তার ব্যর্থতা বা দুর্বলতাও থাকতে পারে, কিন্তু সে ব্যর্থতা শিক্ষক সমাজের নয়। কিন্তু একশ্রেণির শিক্ষক নিজেরা শিক্ষকতা পেশায় থেকেও শিক্ষক সমাজকে কালিমালিপ্ত করে তৃপ্ত হন, তাদের পরাজিত প্রমাণ করার এক অপরাজনীতিতে মেতে উঠেন। কেউ কেউ নিজেদের দলনিরপেক্ষ প্রমাণের জন্য উতলা হয়ে উঠেন। নিজেদের দলনিরপেক্ষ প্রমাণের জন্য সুশীল পোশাকধারী এরা কতটা দলনিরপেক্ষ তা পেন্ডোরার বাক্স খুললেই প্রমাণ হয়ে যাবে। লাল, নীল, সাদা-করা এরা সব সময়েই রাজভক্ত শিক্ষক হয়ে থাকেন। সুতরাং, একাডেমিক ফলাফলে এরা পিছিয়ে থাকলেও রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেন, কেউ কেউ মাস্টার্স থিসিসে আশ্চর্যজনকভাবে ৮১-৮২ নম্বর পেয়ে বিভাগে প্রথম হয়ে যান অথবা চাকরিতে ক্রয়াশীল থাকার নির্দিষ্ট সময়সীমার শর্ত পূরণ না করেও বিশেষ বিবেচনায় পদোন্নতি পান। সুতরাং দিনে এরা থাকেন মানববন্ধনে, রাতে টকশোতে ও পত্রিকায় প্রমাণবিহীনভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখে এরা মুনী/ঋষি সেজে যান। এরা কথায় কথায় শিক্ষকদের নৈতিকতার স্খলনের কথা বলেন। দুর্নীতি নিঃসন্দেহে একটি নৈতিকতার স্খলন। কোনো শিক্ষক যদি দুর্নীতিচক্রে জড়িয়ে পড়েন, শাস্তি অবশ্যই তার প্রাপ্য। তবে দুর্নীতিকরণ যেমন নৈতিকতার স্খলনের পাশাপাশি মিথ্যাচার, অপপ্রচার, কুটচাল ষড়যন্ত্র তৈরিকরণও নৈতিকতার স্খলন। সুতরাং যারা কথায় কথায় সম্মানিত শিক্ষক সমাজকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করেন, সততা ও নৈতিকতার ইস্যু তুলে আমিও এ ব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করছি। যে বা যারা রোকেয়া হলের নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে কথা বলছেন, যদি তারা তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন তবে আপনাদেরও আপনাদের চেয়ারম্যানশিপ, ডিনশিপ অথবা অধ্যাপকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। অনন্তকাল ধরে আপনারা মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাবেন সেটি হতে পারে না। একইভাবে রাতে টকশোতে উপস্থিত হয়ে যারা রোকেয়া হলের নিয়োগ নিয়ে, নিয়োগবাণিজ্যের মিথ তৈরি করছেন আমি তাদের বক্তব্যকেও খোলাখুলিভাবে আজ চ্যালেঞ্জ করছি। কিছুদিন আগে RTV তে রাতের টকশোতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেত্রী শিরিন সুলতানা, মাহমুদুর রহমান মান্না, সাংবাদিক গোলাম মুর্তজা, আওয়ামী লীগ নেতা অসীমকুমার উকিল প্রমুখ। যখন আমি রোকেয়া হলের একজন অনাবাসিক ছাত্রী ছিলাম তখন শিরিন সুলতানা এ হলের ভিপি ছিলেন। প্রভোস্ট ড. তাহমিদা আপার বাসায় নিশ্চয়ই উনি বহুবার গিয়েছেন। হলের ভিপি, জিএস, এজিএস প্রভোস্টের বাসায় গেলেই যদি নিয়োগবাণিজ্য হয়, তবে সেই দোষে তো তিনিও দোষী। মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই ছিলেন না কখনো। পরীক্ষা ছাড়াই প্রিলিমিনারিতে ভর্তি হন গণিত বিভাগে। অনেক ছাত্রনেতাই তখন তার ভর্তির বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ফজলুল হালিম চৌধুরী মাহমুদুর রহমান মান্নার ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। মান্না ভিপি নির্বাচিত হয়ে পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকার করেন। এককালের সেই বামবাদী নেতা এখন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী, বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। কখনো বামবাদী, কখনো আওয়ামীবাদী, কখনো বিএনপিবাদী এ নেতা যে পাটিগণিতের নিয়মের ধার ধারে না, তা তার টার্নকোট (Turn coat) রাজনৈতিক চরিত্র থেকেই বোঝা যায়। মোর্তজা কোনো ধরনের অনুসন্ধানী রিপোর্টিং ছাড়াই যখন রোকেয়া হল নিয়ে কথা বলেন খুব অবাক হই না। কারণ ডাকসু নির্বাচনের সময়টাতে দেখেছি কীভাবে রোকেয়া হলের ৬টি ব্যালটবাক্সকে ৯টি ব্যালটবাক্স হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। আজকাল অসীমকুমার উকিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রাধ্যক্ষগণ বিভাগ ও হলে কত সময় কাটান, সে সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে বোধকরি খুব ব্যস্ত থাকেন। তবে এ নিয়ে ব্যস্ত না থেকে যদি আজীবন জামায়াত, বিএনপি করেও কোন কোন শিক্ষক এ আওয়ামী লীগ শাসন আমলে ভিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এবং কীভাবে নিয়োগ পেয়েছেন সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করতেন তাহলে আজ যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি চলছে তার মূল কারণ নির্ধারণে সক্ষম হতেন। মূলত রোকেয়া হলের নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে অভিযোগ উঠার পরিপ্রেক্ষিতে ০১/০৯/২০১৯ তারিখে সিলেকশন বোর্ড শেষে আমি নিজেই পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তাধীন বিষয় সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাইনি। কিন্তু যে দিন ক্যাম্পাসে ভূত তাড়ানোর মিছিল বের করা হলো তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম এবার মুখ খোলার সময় এসেছে। কী কারণে হঠাৎ করেই রোকেয়া হলের ২১ লাখ টাকার নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে কথা হলো? ০১/০৯/২০১৯ তারিখে মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে যে বোর্ডটি ডাকা হলো মৌখিক পরীক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে তারা তো এক বছর আগে আমার হাতেই মাস্টারোলে নিয়োগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন কেন তাদের বিরুদ্ধে এবং আমার বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্যের কোনো অভিযোগ উঠেনি? তাহলে এক বছর পর মাস্টাররোলে কর্মরত ওই সব কর্মচারীকে যখন স্থায়ীকরণের লক্ষ্যে সিলেকশন বোর্ড বসানো হলো তখন ৩১/০৮/২০১৯ তারিখ রাত্রি থেকেই কেন অসত্য, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর খবর ছাপানো হলো? নিশ্চয়ই এর কারণ আছে। তবে মূল কারণ কোনটি? ভিসি প্যানেল নির্বাচন নাকি রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ হিসাবে গত প্রশাসনের সময়ে নির্মিত ৭ মার্চ ভবনের বিউটি পার্লারের জন্য প্রদত্ত ১০ লাখ টাকা? অন্যদিকে রেকেয়া হলে, দীর্ঘদিন যাবৎ বিশেষ একটি বৃহত্তর জেলার কর্মচারীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ক্রিয়াশীল আছে। ২১ লাখ টাকার অপপ্রচার কি কুমিল্লা অঞ্চলের কর্মচারীদের যে আধিপত্য রয়েছে তা বজায় রাখার অপকৌশল? (উল্লেখ্য, অডিওতেও যে শাহীন রানা ও ফাল্গুনীর কণ্ঠস্বর শোনা যায় তাদের দুজনেরই গ্রামের বাড়ি ওই বিশেষ এলাকায়)। অথবা এ অডিও প্রকাশ কি রোকেয়া হল সংসদের ভিপি জিএস ও এজিএসের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের ফলাফল। নিশ্চয়ই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এ সত্য উদঘাটিত হবে। তাহলে প্রশ্ন হলো আসল ভূত কে? ভিসি প্যানেলকে সামনে রেখে পর্দার আড়ালে বসে যারা খেলছেন তারা? নাকি আরও কোনো মুখোশধারী চরিত্র যারা প্রান্তিক কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যন্ত কদর্য রাজনীতি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে? ডাকসু নির্বাচনের  সময় রোকেয়া হলের পতন ঘটাতে ব্যর্থ এই নিম্ন রুচির রাজনৈতিক শক্তি কি তাই নতুন ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যে নতুন ওঝার সন্ধানে নেমেছেন? আজকের এ বিশ্বায়নের যুগে যখন বিশ্বব্যাপী ছাত্ররা হাই টেকের মাধ্যমে নব আবিষ্কারের নেশায় মত্ত, তখন আশ্চর্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ওঝার শরণাপন্ন হচ্ছেন।

ভূত ও দুর্নীতি কি সমার্থক? কখনই না। কারণ ভূত দেখা যায় না, কিন্তু দুর্নীতি দৃশ্যমান। এটিকে লুকাতে চাইলেও লুকানো যায় না। আর ওঝা? ওঝা তো একটি প্রতারক, ঠকবাজ চরিত্র, যে ধুপধুনা ও লাঠি নিয়ে, শঠতা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভূত তাড়ানোর অভিনয় করে, কিন্তু ভূত সে তাড়ায় না। কারণ ভূত তাড়ানোর কোনো ক্ষমতাই তার নেই। তাহলে আবারও যে প্রশ্নটি মনের মধ্যে ঘুরপাক খেল রোকেয়া হলের ভূত তাড়ানোর জন্য ছাত্ররা একজন ঠকবাজ ওঝার শরণাপন্ন হলো কেন? কারণ নিয়োগবাণিজ্যের গল্পটির পুরুটাই ষড়যন্ত্র, ঠকবাজি, মিথ্যাচার। ভূত একটি অশরীরী আত্মা। মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের রূপও কৃষকায়, সাদা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এখন সময় এসেছে মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের ভূত তাড়ানোর। যারা ক্রমাগতভাবে, প্রমাণবিহীনভাবে, কুৎসিত কদর্য ভাষায় রোকেয়া হলের ২১ লাখ টাকার নিয়োগবাণিজ্য সম্পর্কে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে, তাদের বিতাড়িত করতেই হবে। সৎ, আদর্শবান, নীতিবান, মেধাবী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ক্রিয়াশীল শিক্ষকদের যারা বিতর্কিত করার ও চরিত্র হননের কূট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সময় হয়েছে তাদের মুখ ও মুখোশ খুলে দেওয়ার।

                লেখক : প্রাধ্যক্ষ, রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সর্বশেষ খবর