বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইতিহাস

খেমার-রুজ

১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ’৭৮ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়াজুড়ে চলে এক অদ্ভুত রকমের গণহত্যা। খেমার-রুজ (লাল খেমার) বাহিনীর নেতৃত্বে চলা এ গণহত্যার অন্যরকম কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। এ গণহত্যায় একটি নির্দিষ্ট জাতি অন্য আরেকটি জাতিকে হত্যা করেছিল ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়, বরং নিজ জাতির মানুষ পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে আর শহরের আমুদেপনায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাই ‘এই নষ্ট জাতিকে শুদ্ধ করতে হবে’- ধারণা থেকেই এ গণহত্যার সূত্রপাত। শুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে আসে পুঙ্গেবর কমিউনিস্ট খেমার-রুজ পার্টি। কম্বোডিয়ার ৯৫% মানুষই ছিল খেমার জনগোষ্ঠীর। বুঝতেই পারছেন এই খেমার জনগোষ্ঠীর ভিতরের লাল গ্রুপটি অর্থাৎ বিপ্লবী গ্রুপটিই স্বীয় জাতিগোষ্ঠীর ওপর চালিয়েছিল শতাব্দীর নির্মম এক গণহত্যা।

এই লাল খেমার পার্টির সুপ্রিম লিডারের নাম ছিল পল পট (বড় ভাই)। তা এই দেশপ্রেমিক বড় ভাইটি নিজের দেশের কলুষিত পশ্চিমা বার্গার চিপস খাওয়া জনগোষ্ঠীকে ‘শুদ্ধ’ করার মহান ব্রত নিয়ে মাঠে নামেন। তিন বছরে মেরে সাফ করে ফেলেন ২০ লাখ শহুরে মানুষ। ’৭৫-এর এপ্রিলে ক্ষমতা দখল করলেও কম্বোডিয়ার কমিউনিস্ট গেরিলারা কম্বোডিয়ার শাসন ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছিল ষাটের দশকের গোড়া থেকেই। ’৭৫ সালের ১৭ এপ্রিলে খেমার-রুজ গেরিলারা নমপেন দখল করার পর পল পট সরকার কম্বোডিয়ার নামকরণ করে  ‘ডেমোক্র্যাটিক কাম্পুচিয়া’। তারপর সংস্কার আর শুদ্ধিকরণের নামে নিজের জাতির ওপর চালায় ভয়ঙ্কর এক হত্যাযজ্ঞ। নমপেন ছিল কম্বোডিয়ার রাজধানী। মজার বিষয় হচ্ছে, এ শহর ঘিরেই ছিল বিপ্লবীদের যত ক্ষোভ। খেমার-রুজ গেরিলাদের চোখে নমপেনবাসী ছিল পাতি বুর্জোয়া। যারা কিনা সবসময় ভোগবিলাসে ডুবে থাকে, মদ খায়, নাইট ক্লাবে নাচে, বার্গার খায়, পশ্চিমা পোশাক পরতে চায়, দেশের প্রতি যাদের বিন্দুমাত্র টান নেই, গ্রামে যেতে চায় না, গ্রামের মানুষ নিয়ে ভাবে না, এরা মহান বিপ্লবে অংশ নেয়নি। খেমার-রুজরা নমপেন নগরের নামকরণ করে The Great Whore on the Mekong. একটা শহরের প্রতি কী ভয়াবহ রকম ক্ষোভ থাকলে এমন নাম দেওয়া যায়!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর