শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আলেমদের মর্যাদা সবার ওপরে

মাওলানা উবায়দুল হক সালেহী

আলেমদের মর্যাদা সবার ওপরে

মানবজাতির জন্য সর্বশেষ পথনির্দেশিকা আসমানি গ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ সূরা জুমার, আয়াত ৯। যারা জানে, কোরআনের পরিভাষায় তাদের আলেম বলা হয়। প্রতিটি ধর্মেই আলেম তথা জ্ঞানীদের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ইসলামেও আলেমের মর্যাদা সবার ওপরে। আলেম আর বে-আলেম কখনই মর্যাদা-সম্মানে সমান নয়- এ থেকেই প্রমাণ হয় আলেমের গুরুত্ব।

আলেমের মর্যাদা সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে অসংখ্য বর্ণনা এসেছে। একটি হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আবেদের অপেক্ষা আলেমের মর্যাদা তেমন যেমন তোমাদের সর্বাপেক্ষা ছোট ব্যক্তির তুলনায় আমার মর্যাদা!’ তিরমিজি। আরেক হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আলেমের জন্য সৃষ্টিজগতের সব কিছুই মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রার্থনা করে। এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত।’ জামে আস সগির ও কানজুল উম্মাল।

একজন আলেমের সবচেয়ে বড় মর্যাদা হলো, সে নবীর ওয়ারিশ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আলেমরা নবীদের উত্তরাধিকারী, আর নবীরা দিরহাম বা দিনার অর্থাৎ বৈষয়িক কোনো সম্পদের উত্তরাধিকার রেখে যাননি। তাঁরা উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম তথা জ্ঞান। অতএব যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করেছে, আলেম হয়েছে, সে অনেক অনেক বেশি মুনাফা লাভ করেছে।’ আবু দাউদ।

এ কারণে বিভিন্ন হাদিসে বলা হয়েছে, কেউ যদি কোনো আলেমের সঙ্গে দেখা করে, তার সঙ্গে মুসাফাহা করে, তার দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে দেখা করা, মুসাফাহা করা এবং তাঁর নুরানি চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার সমান সওয়াব ব্যক্তির আমলনামায় লেখা হবে। শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘কেউ যদি খাঁটি আলেমের হাতে তওবা করে বায়াত হয়, সে আসলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুহানি হাতেই তওবা করে বায়াত হলো। প্রত্যেক হক্কানি আলেমের সঙ্গে তাঁর একটি রুহানি সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে আলেমদের কথা-কাজ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই কথা-কাজের অনুরূপ।’ জগতে একজন আলেমের মর্যাদা বোঝাতে গিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্দর একটি উদাহরণ দিয়েছেন। বায়হাকিতে এসেছে, ‘পৃথিবীতে আলেমের অবস্থান আসমানের তারকারাজির মতো। যখন মানুষ তারা দেখতে পায়, তখন সে পথ চলতে পারে। যখন তারকা দেখা যায় না, তখন মানুষ অন্ধকারে পথ হাতড়াতে থাকে।’

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘আলেমকে দেখে দেখে, আলেমের কথা শুনে শুনে জগৎবাসী তাদের জীবন পরিচালনা করবে। যত দিন তারা আলেমদের কথা মেনে জীবন পরিচালনা করবে, তত দিন তারা পথ হারাবে না। যখনই আলেমদের পরামর্শ ছাড়া মানুষ জীবনযাপন শুরু করবে, তখনই তারা জীবনের মহাসড়ক থেকে ছিটকে পড়বে। অন্ধকারে, গলিপথে হারিয়ে যাবে। তাই আলেমদের আকাশের তারার সঙ্গে তুলনা করেছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ একজন আলেম মারা গেলেও তার সওয়াবের খাতা বন্ধ হয় না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি উৎস থেকে তা জারি থাকে। ১. সদকায়ে জারিয়া ২. উপকারী ইলম (জ্ঞান) ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া  করে।’ মুসলিম। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, দুনিয়ায় যেমন সম্মান-প্রতিপত্তির অধিকারী হয় আলেমরা, একইভাবে আখিরাতেও তারা সম্মান-প্রতিপত্তির অধিকারী হবে।

লেখক : সুপার, নন্দীপাড়া সোনার মদিনা হাফেজিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খিলগাঁও, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর