শিরোনাম
সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্গাপূজা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা

ডা. অভিষেক ভদ্র

দুর্গাপূজা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা

বছরঘুরে আবার পূজার আমেজ, সাজসজ্জা আর ঢাকের বাজনায় মুখরিত চারদিক। পূজা মানেই ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া আর প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে হাসি-আনন্দে সময় কাটানো। তবে মনে রাখতে হবে শরতের এই সময়টা আবহাওয়া পরিবর্তনেরও। সারা দিন গরম আর শেষ রাতের ঠান্ডা যাপনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু বিষয়ের প্রতি সতর্ক থাকা জরুরি। একটু বেখেয়ালিতে যেন কারও পূজার আনন্দে কোনো ছেদ না পড়ে।

পূজার হইহুল্লোড়ের সময় যেটা একেবারেই খেয়াল থাকে না, তা হলো পর্যাপ্ত পানি পান। পানিস্বল্পতা গরমের খুবই সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে তা মারাত্মক হয়ে যেতে পারে। প্রচন্ড গরমে ঘোরাঘুরির ফলে শরীরে প্রায়শ পানিশূন্যতা দেখা দেয়, শরীর সহজেই কাহিল হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতা দূরীকরণে যেখানে সেখানে পানি পান না করে, বিশুদ্ধ পানি নিজেই বহন করতে পারেন। কারণ পানি বিশুদ্ধ না হলে তা থেকে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত গরমে যেহেতু ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়, সেহেতু বিশুদ্ধ পানির পাশাপাশি খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, নানা রকম ফল এবং লেবুর শরবত পান করলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ হয় শরীর সতেজ থাকে। আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বর পূজার আনন্দের মাঝে বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে গরমের ঘাম কিংবা বৃষ্টির পানি যেন শরীরে না বসে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ভেজা কাপড় দ্রুত পরিবর্তন করতে হবে, শরীর মুছে নিতে হবে। সারা দিন রোদে ঘুরে বাসায় এসেই প্রচন্ড গরম থেকে ফিরে হঠাৎ খুব ঠান্ডা পানীয় পান না করাই ভালো, এতে সর্দি বা ঠান্ডা লাগার ভয় থাকে। একটু জিরিয়ে নিন, তারপর পানীয় পান করতে পারেন। আর যদি ঠান্ডা লেগেই যায় তবে হালকা গরম পানি, লাল চা পান করুন। দুবেলা গরম জলে গড়গড়া করলে আরাম পাবেন।

পূজায় একটু ভরপেট ভোজন হবে না-সে তো আর হয় না! অষ্টমীর লুচি-ডাল-তরকারি আর নবমীর কচি পাঁঠার ঝোল-এসব খেতে নিষেধ করাও ভীষণ অন্যায়! তবে বয়স্ক এবং যারা বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন উচ্চ-রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনিরোগ কিংবা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের এসব খাবর গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। ভাজাপোড়া, অধিক তেল, মসলা জাতীয় খাবার যতটা পারা যায় কম খেতে হবে। একবেলা যদি খুব জবরদস্ত খাওয়া-দাওয়া হয়, তা হলে অন্যবেলায় একটু হালকা খাওয়া ভালো। চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত। এ ছাড়া ঘোরাঘুরির সময় বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। একান্তই খেতে হলে খাবার বাসি-পচা কি না তা খেয়াল রাখা উচিত।

ঘোরাঘুরি হোক শরীরের অবস্থা বুঝে। পূজার কেনাকাটা, মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে বেড়ানো কিংবা অনুষ্ঠান আয়োজনে যারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। একটানা ছোটাছুটি না করে মাঝে মাঝে কিছুক্ষণ বসে নিন। দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে শরীরের অবসাদ দূর করে আবার ঘুরতে বের হতে পারেন। এতে ক্লান্ত হবেন না, শরীর চাঙ্গাও লাগবে। পূজায় শুধু আনন্দ আর নিজেদের নিয়ে মেতে থাকলে হবে না, বাড়ির বয়োবৃদ্ধ এবং রোগীদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। এই দিনগুলো পূজার আচারের অংশ দীর্ঘক্ষণ উপবাস থাকা এবং আবার অধিক ভোজন করার ফলে অনেকের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের এ সময়ে অনিয়মের ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক কমে যেতে পারে। ফলে মাথা ঘোরে, মাথা ঝিমঝিম করে, চোখে অন্ধকার লাগে, শরীর অস্থির লাগে, মেজাজ খিটমিটে হয় ও শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মিষ্টিজাতীয় খাবার তাড়াতাড়ি খেতে দিতে হবে। এ ছাড়া হার্ট, কিডনি, লিভারের রোগীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত।

শিশুদের স্বাস্থ্য সব সময়ই সংবেদনশীল। অল্প ঘামেই পানিস্বল্পতা হতে পারে, একটু বৃষ্টির পানিতে ভিজলেই ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই বাচ্চাদের যতটা সম্ভব কড়া রোদ-বৃষ্টি থেকে নিরাপদে রাখতে হবে, বাড়ি থেকে ছোট বোতলে পানি নিতে হবে যাতে তাদের একটু পরপর পানি খাওয়ানো যায়।  সারা দিনের  ঘোরাফেরার আর উৎসবের ধকল কাটিয়ে বাড়ি ফিরেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলে হবে না। ঘুমানোর আগে সম্ভব হলে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীরের পরিশ্রমজনিত ব্যথা ও ক্লান্তি অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে। দিন শেষে নির্বিঘ্ন ঘুম আপানাকে পুজোর পর দিনটি উপভোগের জন্য তৈরি করবে, তাই ৭-৮ ঘণ্টার ভালো ঘুম জরুরি।

 লেখক : প্রভাষক, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর