বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইলিশ নিষেধাজ্ঞা

ফাতিমা পারভীন

ইলিশ নিষেধাজ্ঞা

৬৫ দিনের অবরোধের পর আবারও আজ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই সময়ে ইলিশ ধরা, বাজারজাত করা ও সংরক্ষণ একদম নিষিদ্ধ। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে শাস্তির বিধান রয়েছে।

মূলত ৬৫ দিনের অবরোধ ছিল সব ধরনের প্রজাতির মাছ সংরক্ষণের জন্য। আর এ অবরোধের আওতায় সব বড় জাহাজে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ ওই জাহাজের জালগুলোর ফাঁস খুবই ছোট যা উপকূলীয় অঞ্চলের ট্রলারের জাল থেকে একদম আলাদা। জাহাজের জালে আটকে পড়া বড় ও প্রয়োজনীয় মাছ ক্রেন দিয়ে উঠিয়ে অবশিষ্ট ছোট মাছগুলো ফেলে দেওয়া হয়। আর ফেলে দেওয়া ওই মাছগুলো বিভিন্ন প্রজাতির মাছের নিঃসৃত মৃত পোনা। তাই সব ধরনের প্রজাতির মাছ আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

সুবিধাবঞ্চিত সমাজের পিছিয়ে পড়া জেলে জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের জন্য ইলিশ মৌসুমের ইলিশের ভূমিকা ব্যাপক। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ইলিশের রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। এর মধ্যে জাটকাও একটি প্রজাতি। এ প্রজাতিটি কখনই বড় ইলিশের আকার ধারণ করে না। ইলিশ নিয়ে গবেষণা না করে তা সংরক্ষণের জন্য ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন জাটকা সংরক্ষণের কর্মসূচি দেওয়ায় ইলিশের ওপর নির্ভরশীল জেলে পরিবার বিপাকে পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মা-ইলিশ সংরক্ষণের পর মা-মাছের নিঃসৃত পোনা সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। নিঃসৃত ইলিশের পোনাকে আঞ্চলিক ভাষায় ‘চাপিলা’ বলে। এগুলো সাধারণত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ২-৩ ইঞ্চি লম্বা হয়ে বঙ্গোপসাগরে অভিপ্রায়ন ঘটায়। ইলিশ সংগ্রহে বাঁধা জাল, গড়া জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ। অথচ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর ওপর কোনো নজরদারি বা নিষেধাজ্ঞা জারি আছে বলে মনে হয় না। থাকলে জেলেরা কোনোরকম সংগ্রহ করতে পারত না এসব। নদী থেকে যখন কর্তৃপক্ষ জালগুলো তুলে পুড়িয়ে ফেলে তখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে যায় হতভাগ্য জেলেদের।

বিশ্বের উৎপাদিত ইলিশের ৬৫-৭৫ ভাগ উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন ৫.১৭ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশে যে পরিমাণ ইলিশ আহরিত হয় তার ৫ ভাগের ১ ভাগ বরগুনা জেলায় পাওয়া যায়। বঙ্গোপসাগরের তীরে জেলাটি অবস্থিত বলে দেশের মৎস্য খাতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় জেলা এটি। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় রয়েছে দেশের বৃহত্তম মৎস্য পাইকারি বাজার বিএফডিসি। বরগুনায় প্রধান তিন নদ-নদী পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর এবং বঙ্গোপসাগর থেকে প্রতি বছর ইলিশ আহরিত হয় প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন। তাই উপকূলীয় জেলা বরগুনায় একটি ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র ও ইলিশ মিউজিয়াম স্থাপন করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন? এই নদ-নদীগুলোর ইলিশ সবচেয়ে সুস্বাদু। বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ইলিশের স্বাদ বিশ্বের সব মজাদার খাবারকে হার মানায়। সুস্বাদু হওয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসবে বরগুনা থেকেই ইলিশ সংগ্রহের সুনাম আছে এবং দামও সহনীয়। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত পরিবারের সবাই সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারেন। তা ছাড়া বরগুনার ইলিশের আকার, প্রকৃতি আর অতুলনীয় রুপালি কালার একদম অন্য জায়গার তুলনায় আলাদা। তাই এ জেলার সর্বস্তরের মানুষের প্রাণের দাবি একে ইলিশের জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হোক। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২ অক্টোবর বরগুনায় ইলিশ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। হরেকরকম ইলিশের তৈরি খাবার আর অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল ওই উৎসবে এবং এক দিনেই ৮৭ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে।

পোশাকশিল্প যেমন অর্থনীতির প্রথম পণ্য হিসেবে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে তেমনি বরগুনার ইলিশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতেও ইলিশ দেশের অর্থনীতিতে আশীর্বাদ বয়ে আনবে। এমনকি বর্তমানে উপকূলীয় জনপদের অর্থনীতি ও মানুষের জীবন প্রতিদিন পাল্টে দিচ্ছে নতুনভাবে। আবার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে ইলিশের ভূমিকা ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করছে।

 

লেখক : নারী ও শিশু অধিকার কর্মী।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর