বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুদ কবিরা গুনাহ ও শোষণের হাতিয়ার

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

সুদ কবিরা গুনাহ ও শোষণের হাতিয়ার

সুদ শোষণের হাতিয়ার। আমাদের দেশের অভিজ্ঞতায়ও বিষয়টি খুব স্পষ্ট। নানা কৌশলে সুদখোররা মজলুম মানুষকে প্রলুব্ধ করছে এবং তাদের ভাগ্যোন্নয়ন ও কল্যাণের নামে সর্বস্বহারা করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান অত্যন্ত কঠোর। হাদিসে উল্লেখ আছে, সুদ খাওয়ার পক্ষে ছলছুতা ও চাতুরীর আশ্রয়ের প্রকারভেদে সুদখোরদের আল্লাহ হাশরের দিন কুকুর ও শূকর বানিয়ে ওঠাবেন। যেমন বনি ইসরাইলের একদল লোক তাদের জন্য পবিত্র শনিবার মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও চাতুরীর মাধ্যমে মাছ ধরার নিয়তে জলাশয়ের পাশে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রাখত। শনিবার সেই গর্তগুলোয় মাছ জড়ো হতো এবং রবিবার তারা তা শিকার করে আনত। এ ষড়যন্ত্রমূলক চাতুরীর জন্য আল্লাহ তাদের বানর ও শূকরে পরিণত করে দিয়েছিলেন। একইভাবে সুদ খাওয়ার কোনো ফন্দি-ফিকির আল্লাহর কাছে অজ্ঞাত থাকে না। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই। তাকে সহায়তা করা অন্য মুসলমানের কর্তব্য। কেউ বিপদে পড়লে অথবা কারও অর্থের প্রয়োজনে তাকে ধার দিয়ে সহায়তা করা যায়, কিন্তু তার বদলে সুদ গ্রহণ চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। বিশিষ্ট তাবেয়ি হজরত আইয়ুব সুখতিয়ানি (রহ.) বলেন, তারা আল্লাহকে এমনভাবে ধোঁকা দিতে চায়, যেমন কোনো শিশুকে মিথ্যা আশ্বাসে তারা প্রবঞ্চনা দিয়ে থাকে। তারা তা না করে যদি স্বাভাবিকভাবে সুদ খেত, তবে হয় তো তাদের শাস্তি কিছুটা লঘুও হতে পারত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সুদের গুনাহ সত্তরটি। তার মধ্যে অপরাধের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন গুনাহটি হলো আপন মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারের সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য প্রকারের সুদ হলো সুদের পাওনা আদায়ের জন্য কোনো মুসলমান ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ দখল করা।’ তাবারানি, ইবনে মাজা। এ থেকে উপলব্ধি করা যায়, সুদ কত জঘন্যতম অপরাধ। সুদ কতটা জঘন্য ও পাপের কাজ তা বোঝানোর জন্য এর সঙ্গে ব্যভিচারের তুলনা করা হয়েছে। ইসলামী বিধানে ব্যভিচার মৃত্যুদ-তুল্য অপরাধ। কিন্তু যারা সুদ গ্রহণ করে তাদের পাপ ব্যভিচারীদের চেয়ে যে বেশি তা বোঝানোর জন্যই এ তুলনা করা হয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে এক ভাষণে সুদের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ৩৬ বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ।’ আবিদুনইয়া, বায়হাকি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, ‘প্রকারভেদে সুদের ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে, তার মধ্যে সর্বনিম্ন হচ্ছে নিজের মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমান।’ ইবনে মাজা, বায়হাকি। সুদ শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়। সমাজবদ্ধ মানুষের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এ ব্যবস্থা। সুদ এমনই এক প্রথা যা সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টিতে অবদান রাখে। যে কারণে ইসলাম শুধু সুদ গ্রহণকেই অবৈধ ঘোষণা করেনি সুদ দেওয়াকেও নিষিদ্ধ করেছে। হজরত আবুবকর (রা.) বলেন, ‘মূলধনের বেশি গ্রহণকারী ও বেশি প্রদানকারী উভয়েই দোজখি।’ অর্থাৎ যে সুদ নেবে এবং যে দেবে, উভয়েই সমান গুনাহগার। আল্লাহ আমাদের যে কোনো ধরনের সুদের ব্যবসা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর