বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্তরা। এ অভিযোগে বুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকসহ সংগঠনের ১০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ পৈশাচিক এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের ১১ নেতা-কর্মীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে ‘ছাত্রলীগপনার’ যে ঘটনা প্রায়ই ঘটছে তার সর্বশেষ উদাহরণ হলো বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। রবিবার ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা আবরার ফাহাদকে তার রুম থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাকে নৃশংস নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। ফাহাদের বাবা ব্র্যাকের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, এলাকায় তাদের পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে পরিচিত। ফাহাদ কোনো রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ফেসবুকে তিনি যে পোস্ট দিয়েছিলেন তাতে কোনো দলীয় রাজনীতির আভাস মেলেনি। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে তিনি তার মতামত রেখেছিলেন ফেসবুক পোস্টে। কিন্তু অসহিষ্ণুতার প্রতিভূ হিসেবে আবির্ভূত একটি বিশেষ ছাত্র সংগঠনের ক্যাডারদের তা পছন্দ হয়নি। মেধাবী আবরার ফাহাদ বুয়েটের পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। মা চেয়েছিলেন তার সন্তান মেডিকেলে ভর্তি হোক। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার উদগ্র আগ্রহ পোষণ করতেন তিনি। আর এ আগ্রহই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াল। লজ্জা ও পরিতাপের বিষয়, তার হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাই বুয়েটেরই শিক্ষার্থী। যে শিক্ষাঙ্গনে কেবল মেধাবীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ মেলে। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে- মেধাবীরা সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয় কীভাবে। এই মানবিক বিকৃতি নিঃসন্দেহে দুর্ভাগ্যজনক। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আবরার ফাহাদের বাবা তার সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেছেন। সন্দেহ নেই এ দাবিতে দেশের অধিকাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে। আমরাও চাই খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস ও খুনোখুনির চর্চা বন্ধে খুনিচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন সম্পর্কে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। ছাত্রলীগ এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে তাদের ১১ সদস্যকে বহিষ্কার করেছে। তাদের এ সুমতি প্রশংসার দাবিদার। আমরা আশা করব, নিজেদের পচনদশা থেকে রক্ষায় ছাত্রলীগ বিতর্কিতদের ব্যাপারে সতর্ক হবে। সোনালি ঐতিহ্যের অধিকারী এই ছাত্র সংগঠন সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে- এটি কোনোভাবে প্রত্যাশিত নয়।