শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ! অভিশপ্ত হওয়া থেকে আমাদের বাঁচান

মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী

হে আল্লাহ! অভিশপ্ত হওয়া থেকে আমাদের বাঁচান

সূরা ফাতিহায় আমরা বলি, ‘গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম’- ‘হে আল্লাহ! যাদের ওপর তুমি রাগ হয়েছে, তোমার গজব যাদের ওপর পড়েছে, তাদের পথে আমাদের নিও না।’ লিসানুল আরব ও মুজামুল ওয়াসিতের মতো বিখ্যাত আরবি অভিধানে ‘গজব’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে- রাগ হওয়া, রাগ করা। অভিধানবিদরা আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলেন, রাগ কমও হতে পারে, বেশিও হতে পারে। রাগ কম হলে শাস্তি কম। রাগ বেশি হলে শাস্তিও বেশি। কখনো কখনো রাগের পেছনে ভালোবাসা-মমতাও লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আল কোরআন ও হাদিসে রাগের পাশাপাশি এমন একটি শব্দ এসেছে, যার কোনো কমবেশি নেই। নেই তার পেছনে লুকিয়ে থাকা কোনো ভালোবাসা-মমতা। সেই শব্দটি হচ্ছে ‘লানত’। বাংলায় যাকে আমরা ‘অভিশাপ’ বলি। এমন কিছু কাজ আছে, যা করলে আল্লাহ নিজেই বান্দাকে অভিশাপ দেন। আর আল্লাহ যাকে অভিশাপ দেন, সহজ কথায় তার অর্থ দাঁড়ায় প্রতিটি সৃষ্টিও তাকে অভিশাপ দেয়। লানাতুল্লাহ বা আল্লাহর অভিশাপ কথাটির অর্থ হলো, বান্দার প্রতি আল্লাহর কোনো রহমত-ভালোবাসা-স্নেহ নেই, আছে শুধু অভিশাপ আর অভিশাপ। এ ধরনের মানুষকে কোরআনের ভাষায় মালউন বলা হয়েছে। যারা আল্লাহর খেয়ে আল্লাহর পরে আল্লাহকেই অবিশ্বাস করে, আল্লাহর সাম্রাজ্যে থেকে আল্লাহদ্রোহী হয়ে ওঠে, তাদের চেয়ে বড় মালউন বা অভিশপ্ত সৃষ্টি আর কে আছে?

সে কথাটিই আল্লাহতায়ালা কোরআনে এভাবে বলেছেন, ‘যারা তার স্রষ্টা আল্লাহকে অস্বীকার করে আর এভাবেই জীবন ঘোড়াকে লাগামহীনভাবে চালাতে থাকে, একসময় সে বিদ্রোহী অবিশ্বাসী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তাদের ওপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং প্রতিটি মানুষের অভিশাপ ঝরতে থাকে অঝোর ধারায়।’ সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৬১-১৬২। আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসুলকে কষ্ট দেয়, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর লানত। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ সূরা  আহজাব, আয়াত ৫৭।

আল্লাহকে অমান্য করা, তাঁর নির্দেশ অস্বীকার করা আর আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে কষ্ট দেওয়া দুটো বিষয় আসলে একই। আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালন না করলেই আল্লাহ ও নবীকে কষ্ট দেওয়া হয়। আর যে আল্লাহ ও তাঁর নবীকে কষ্ট দেয় সে হয়ে যায় মালউন বা অভিশপ্ত। এবার একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আমি আপনি কতভাবে কত হাজার বার আল্লাহর নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো জীবনযাপন করেছি, কতভাবে যে আল্লাহ আর নবীকে কষ্ট দিয়েছি তার কোনো হিসাব আছে? এভাবেই চলছে আমাদের জীবন। আর একদিন এভাবেই এসে যাবে মৃত্যুর পালকি। কিন্তু তারপর কী হবে চিন্তা করেছি কখনো? আল্লাহর অভিশাপ নিয়ে আল্লাহর সামনেই দাঁড়াতে হবে আমাদের। আর পেতে হবে ‘আজাবুমমুহিনা’Ñ ‘যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’।

যদি আমরা একটু কষ্ট স্বীকার করে আল্লাহর নির্দেশগুলো মেনে চলতে পারি, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে চলতে পারি, তাহলে আমাদের ভাগ্যে জুটবে আল্লাহর ক্ষমা এবং অনাবিল সুন্দর জান্নাত। আল্লাহ বলছেন, ‘হে আমার বন্ধু! আপনার উম্মতকে বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত হতে চাও, তাহলে আমার দেখানো জীবনপদ্ধতি অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং ক্ষমার কোমল চাদরে তোমাদের জড়িয়ে নেবেন। অবশ্যই আল্লাহ দয়ামায় ও ক্ষমাশীল।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৩১। হে আল্লাহ! আপনার কুফরি এবং আপনার রাগের কারণ হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করুন। অভিশাপের তীরে বিদ্ধ নয়, রহমতের বর্ষণে আমাদের সিক্ত করুন।

লেখক : খতিব, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর আবাসিক এলাকা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কুর্মিটোলা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর