দেশের সম্ভাবনাময় কাগজশিল্প রুগ্ন শিল্পে পরিণত হচ্ছে, এগিয়ে চলেছে ধ্বংসের দিকে। বৈরী পরিবেশের শিকার হয়ে ইতিমধ্যে দেশের ১০৬টি কাগজকলের মধ্যে ৫৯টি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ৬টি আংশিক চালু থাকলেও বন্ধের পথে। ১৫টি কাগজকল নিজেদের অন্য ব্যবসার সহযোগিতায় উৎপাদন ধরে রাখতে পারলেও বাকিগুলো ধুঁকছে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক বছরের মধ্যে বাকি কলগুলোও বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন এ শিল্পের সংশ্লিষ্টরা। বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন নিয়ে যে শিল্পটি বড় বিনিয়োগে মাঠে নেমেছিল, সেই খাতটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। লোকসানে পড়ে একের পর এক কাগজকল বন্ধ হচ্ছে। দেউলিয়া হয়ে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। বেকার হচ্ছে শ্রমিক। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ব্যাংক ঋণের চড়া সুদ, গ্যাস-বিদ্যুতের উচ্চমূল্য, বন্ডসুবিধার অপব্যবহার ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অবৈধ আমদানি, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও নিম্নহারে রপ্তানি প্রণোদনার কারণে সম্ভাবনাময় খাতটি অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। কাগজশিল্পের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, গার্মেন্টের মতো রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য কিছু কাগজপণ্যে সরকারের দেওয়া বন্ডসুবিধার অপব্যবহার করে প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কাগজ শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনে অবৈধভাবে খোলা বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এক কাগজের ঘোষণা দিয়ে ডিউটি ফাঁকি দিয়ে আনা হচ্ছে অন্য কাগজ। শুল্কমুক্ত সুবিধা ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে আনা এসব কাগজের সঙ্গে দামে টিকতে পারছে না দেশি কাগজ। দেশের কাগজশিল্পে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। দেশের চাহিদা পূরণ করেও ২০১৮ সালে ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাগজ রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর রপ্তানি ৩০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশে কাগজের চাহিদা ৯ লাখ টন। কাগজকলগুলোয় উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ লাখ টন। কিন্তু কলগুলো ৬ লাখ টন কাগজ উৎপাদন করেও তা বিক্রি করতে পারছে না বন্ডসুবিধায় আনা কাগজ কালোবাজারে চলে যাওয়ায়। সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে বাঁচাতে বন্ডসুবিধার অপব্যবহার রোধের উদ্যোগ নিতে হবে। এ শিল্পের প্রতি পৃষ্ঠপোষক মনোভাব নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।