রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ন্যায়ের আদেশ দিয়ে অন্যায়ের নিষেধ করুন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

ন্যায়ের আদেশ দিয়ে অন্যায়ের নিষেধ করুন

আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বিশ্বাসী বান্দারা! তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা মানুষকে ভালোর দিকে, আলোর পথে পরিচালনা করবে। তারা মানুষকে ভালো কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজের নিষেধ করবে। যে সমাজে-দেশে এমন আলোকিত মানুষের সংঘ থাকবে তারাই সফল হবে, দুনিয়া-আখিরাতে সুখী হবে, সেরা হবে।’ সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১০৪। ‘ওয়ালতাকুস’ শব্দটি আদেশ তথা অর্ডারসূচক শব্দ। অর্থ ‘থাকা উচিত’ মানে থাকতেই হবে। এ থেকে মুফাসসিররা একমত হয়েছেন, বিশ্বাসী সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায়ের আদেশ অন্যায়ের নিষেধ করার জন্য একটি শক্তিশালী সংস্থা থাকতেই হবে। সমাজের সব মানুষ ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করতে পারে না। সবার সেই শক্তি থাকে না। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন একটি কর্তৃত্বশীল সংস্থা থাকা উচিত যারা সমাজকে সুন্দর-সুস্থ রাখার জন্য ন্যায়ের আদেশ করবে এবং অন্যায়ের নিষেধ করবে। যে সমাজে ন্যায়ের আদেশ করার মতো শক্তিশালী সংস্থা আছে, সে সমাজ সুখী সমাজ, সফল সমাজ। যে সমাজে এমন বাহিনী নেই তা অসুখী, চূড়ান্ত অস্থিতিশীল বসবাস-অযোগ্য সমাজ; এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শততমেরও নিচে। এর কারণ একটা- দেশে ন্যায়ের আদেশ অন্যায়ের নিষেধ করার মতো চূড়ান্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থার শিথিলতা। এ ক্ষেত্রে তারা কতটা সফল এবং ক্ষমতা প্রয়োগে কতটা স্বাধীন তা প্রত্যেক পাঠককে ভাবাচ্ছে। এ দেশ দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত ওয়ার উপক্রম কেন? কারণ একটাই, ভালোর আদেশ আর খারাপের নিষেধ করার মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের ব্যাপারে এত এত কোরআনের উদ্ধৃতি এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস আছে যে, তা দিয়ে বড়সড় একটি সংকলন তৈরি করা সম্ভব। আর ওই আয়াত-হাদিসগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যদি এক জায়গায় করা হয় তাহলে কয়েক ভলিউম বই হয়ে যাবে। আফসোস! ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিত্বরা যেমন সাধারণ মানুষের কানে ন্যায়ের আদেশ-অন্যায়ের নিষেধ সম্পর্কে কিছু বলছেন না, তেমনি পরিবার-সমাজও এ বিষয়ে আশ্চর্যরকম নীরব হয়ে গেছে। ওপরের আয়াতে একটি বাহিনীর কথা বলা হলেও অন্যান্য আয়াতে প্রত্যেক মুমিনকেই ন্যায়ের আদেশদাতা এবং অন্যায়ের নিষেধকারী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন অন্যায় কাজ দেখবে, সামর্থ্য থাকলে হাত দিয়ে, নয় তো কথা দিয়ে তা প্রতিহত করবে। তা যদি না পারো তাহলে মনে মনে ওই পাপকে ঘৃণা করবে। আর জেনে রেখো, এটা হলো ইমানের সবচেয়ে দুর্বল পরিচয়।’ হায়! আজ অন্যায় প্রতিহত তো দূরের কথা আমরা মনে মনেও ঘৃণা করছি না। অর্থাৎ ইমানের দুর্বলতম পরিচয়ও আমাদের সমাজে নেই। আল কোরআনে আল্লাহ বলছেন, ‘তোমার প্রভু শাস্তির চাবুক মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন ওইসব প্রজম্মকে যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছে এবং অনিয়ম-দুর্নীতিতে সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’ হে আল্লাহ! এ দেশের মানুষের মনে আপনি আপনার বিচারব্যবস্থার ভয় ঢুকিয়ে দিন। চিরতরে ধ্বংস হওয়া থেকে আমাদের প্রজš§কে রক্ষা করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর