বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাহাড়ে অশান্তি

সন্ত্রাসীদের সামাল দিন

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মানুষ চার পাহাড়ি সংগঠনের ক্যাডারদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। গত দুই দশকে পাহাড়ে সন্ত্রাসী আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অস্ত্রবাজির শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১ হাজার ১০০ মানুষ। আহতের সংখ্যা অন্তত ১ হাজার ৪০০। পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে চাঁদা দেওয়া ছাড়া কেউ বসবাস করতে পারে না। ব্যবসায়ী, পরিবহন সেক্টর, ঠিকাদার, মুদি দোকানদার, সরকারি চাকরিজীবী, এনজিওসহ সবাই আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর কাছে জিম্মি। ছয় মাস ও বার্ষিক হারে এ সংগঠনগুলোকে চাঁদা দিয়ে নিতে হয় কথিত ‘কার্ড’। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। এমনকি খুনের ঘটনাও ঘটে। শুধু চাঁদাবাজি নয়, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, খুনের বদলা খুন এবং সাংগঠনিক দ্বন্দ্বের কারণে তিন পার্বত্য এলাকায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। দুই দশক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে চুক্তি হয়। যা পরে শান্তিচুক্তি হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু এ চুক্তির বিরোধিতা করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০১০ সালে জেএসএস আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়ে। আত্মপ্রকাশ ঘটে জেএসএস-এমএনের। সর্বশেষ ইউপিডিএফ ভেঙে হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। বর্তমানে এ চারটি সংগঠনই তিন পার্বত্য অঞ্চলে কাজ করছে। যেখানে যে সংগঠনের শক্তি বেশি, তাদের অবৈধ রাজত্ব সেখানে গড়ে উঠছে। ২০০১ সালে রাঙামাটির নানিয়ার চরে তিন বিদেশিকে অপহরণ করে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটনের ক্ষেত্রে আদর্শস্থান হিসেবে বিবেচিত হলেও পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অপতৎপরতায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সেভাবে ভিড় জমাচ্ছে না ওই এলাকায়। বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে বিভেদের বীজ বপনের জন্যও দায়ী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম। পার্বত্য তিন জেলার উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর তৎপরতায় বাদ সাধা দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবের অবস্থান শক্তিশালী করার বিষয়টিও গুরুত্বের দাবিদার। এ বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে নিয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর