বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোরআনে পানিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে

মাওলানা আবদুর রশিদ

পানির আরেক নাম জীবন। পানি ছাড়া কোনো জীবজন্তুর বেঁচে থাকার বিষয়টি অকল্পনীয়। মানুষের জীবন ধারণ, চাষাবাদ সবকিছুর সঙ্গে রয়েছে পানির সম্পর্ক। এটি মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত। পানি মহান আল্লাহর এক অমূল্য নিয়ামত। দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে পানির বিশিষ্ট ভূমিকা থাকায় আল কোরআনের ৪৬ স্থানে পানির বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। সূরা আরাফের ৫০ নম্বর আয়াতে পানিকে জান্নাতবাসীর জন্য নিয়ামত ও জাহান্নামিদের জন্য শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনিয়াদারির জীবনেও পানি এমন এক অপরিহার্য জিনিস যা ছাড়া জীবন ধারণের কথা কল্পনা করাও কঠিন। পানি ইবাদতেরও অন্যতম অনুষঙ্গ। আল্লাহর ইবাদতের জন্য বান্দাকে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। পবিত্রতা অর্জনে পানির ব্যবহার সুবিদিত। মানবজীবনেই শুধু নয়, পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পানির অবদান অনস্বীকার্য।

পানি জীবনের উৎস। কোরআনে এ বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তো পানি থেকে সব প্রাণবান বস্তুকে সৃষ্টি করেছি।’ পানির সঙ্গে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের সম্পর্কের কথা প্রকাশ পেয়েছে কোরআনের আরও কয়েকটি আয়াতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তো আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন এবং তা তোমাদের জন্য পানীয়। এ থেকেই উদ্ভিদসমূহের জন্ম হয়। যেগুলোয় তোমরা পশুচারণ করে থাকো।’ সূরা নাহল, আয়াত ১০।

আখিরাতের জীবনে পানি জান্নাতবাসীকে উপহার দেওয়া হবে ও জাহান্নামবাসীকে শাস্তি হিসেবে পানি থেকে বঞ্চিত করা হবে। জাহান্নামবাসী ভয়াবহ কষ্টে পানির পিপাসায় পড়ে জান্নাতিদের কাছে পানি চাইবে, কিন্তু তারা যেহেতু অবিশ্বাসী তাই তাদের পানি দেওয়া হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘জাহান্নামবাসী জান্নাতবাসীকে ডেকে বলবে, আমাদের ওপর কিছু পানি বা খাদ্য ফেলে দাও বা আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তা থেকে, তারা বলবে আল্লাহ এ দুটি অবিশ্বাসীদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন।’ সূরা আরাফ, আয়াত ৫০। পানি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে অপচয় হচ্ছে। পানি যেহেতু আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত সেহেতু আল্লাহ পানির অপচয় নিষেধ করেছেন। পানির অপচয় ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক গর্হিত কাজ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আহার কর ও পান কর কিন্তু অপচয় কোরো না, তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ সূরা আরাফ, আয়াত ৩১।

ইসলামে পানির সদ্ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পানি যেহেতু আল্লাহর নিয়ামত, সেহেতু পানির সংরক্ষণ ও এর সদ্ব্যবহার মুমিনদের জন্য অবশ্যপালনীয়। এমনকি অজু করার সময়ও যাতে পানির অপচয় না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। ইবনে মাজাহর হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হজরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) একদিন বসে অজু করছিলেন। এমন সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর পানির ব্যবহার দেখে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এত অপচয় কেন? সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন অজুর মধ্যে কি অপচয় হয়? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। এমনকি নদীর পাশে বসেও অজু করার সময় (পানি অযথা খরচ করলে অপচয় হিসেবে গুনাহ হবে)।’

পানি কীভাবে পান করতে হবে সেই আদব মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। বসে ডান হাত দিয়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে পানি পান করা সুন্নাত। তিন শ্বাসে পানি পান করা উত্তম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো শুধু সুন্নত নয়, বরং এর প্রতিটিতে রয়েছে শরীর সুস্থ রাখার নিদর্শন।  রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পানির পাত্র ঢেকে রাখো এবং বাসনগুলো উল্টে রাখো।’ মুসলিম।

আল্লাহ আমাদের পানির অপচয় থেকে দূরে থাকার এবং নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়ের সুরক্ষার  তাওফিক দান করুন।

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর