শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীদের প্রতি নবীজির হুঁশিয়ারি!

মাওলানা রফিক আহমদ ওসমানী

ব্যবসায়ীদের প্রতি নবীজির হুঁশিয়ারি!

ব্যবসা-বাণিজ্য বড় ধরনের ইবাদত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অধিকাংশ সাহাবির পেশা ছিল ব্যবসা। ব্যবসার মধ্যে বরকত থাকে। ব্যবসায়ীদের হাশর তাই নবী-রসুল-সাহাবিদের সঙ্গে হবে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রিজিককে দশ ভাগ করলে নয় ভাগই পাওয়া যাবে ব্যবসার মধ্যে।’ তাই জীবনে যারা সমৃদ্ধ হতে চায়, তাদের উচিত ব্যবসার পথে হাঁটা। তবে ব্যবসায় মিথ্যা ঢুকিয়ে দিলে বরকত নষ্ট করে দেন আল্লাহ। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে, ছলচাতুরী করার মাধ্যমে ব্যবসায় সাময়িকভাবে বেশি মুনাফা উপার্জন করা সম্ভব হলেও এর দীর্ঘমেয়াদি ফল ভালো হয় না। মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। কারণ মুনাফিকির প্রথম পরিচয় হলো তারা মিথ্যাবাদী। সততা কিংবা সত্যবাদিতা ব্যবসায় সাফল্যলাভের ক্ষেত্রে মূলধনের মতো। আপনি যখন মিথ্যা বলে, প্রতারণা করে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সাময়িক লাভবান হচ্ছেন, তখন আপনার স্থায়ী সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট হয়ে যায়। একজন ক্রেতা ঠকে আরও দশ জন ক্রেতাকে আপনার সঙ্গে কেনাবেচা করতে নিষেধ করে। এভাবেই প্রতারণা ও মিথ্যা ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বয়ে আনে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মিথ্যা শপথ করে পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয় বটে; কিন্তু এর মাধ্যমে বরকত চলে যায়।’ বুখারি। একজন আদর্শবান কিংবা সৎ ব্যবসায়ীকে আল্লাহ দুনিয়ায় উত্তম মর্যাদা দান করেন। তার সততার জন্য ব্যবসায় বরকত বাড়িয়ে দেন। আবার সত্যবাদিতার জন্য পরকালেও উত্তম মর্যাদা দান করবেন। পাশাপাশি মিথ্যাবাদীর ব্যবসায় মিথ্যা বলার কারণে দুনিয়ায় যেমন ব্যবসার বরকত কমে যায়, পরকালেও তাকে জাহান্নামের আগুনে পুড়তে হবে। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মিথ্যা গুনাহর দিকে নিয়ে যায়, আর গুনাহ জাহান্নামে পৌঁছে দেয়।’ মুসলিম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। সেদিন তাদের জন্য থাকবে শুধু যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। প্রথম ব্যক্তি হলো, যার কাছে অতিরিক্ত পানি রয়েছে আর সে পানি থেকে মুসাফিরকে বঞ্চিত রাখে। দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো, যে কারও কাছে বায়াত গ্রহণ করে শুধু পার্থিব স্বার্থের জন্য। তার ইচ্ছা ও চাহিদা মোতাবেক তাকে দিলে সে অনুগত থাকে, আর না দিলে অনুগত থাকে না। তৃতীয় ব্যক্তি হলো, যে কারও সঙ্গে পণ্য নিয়ে দামদর করে এবং আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করে বলে, সে কিনতে এত মূল্য দিয়েছে, আর তা শুনে ক্রেতা খরিদ করে নেয়।’ বুখারি)। মিথ্যা বলে যতই রোজগার করুন, কখনো সফল হতে পারবেন না। মিথ্যা-অন্যায়ের পথে যে আয় করে তার অভাব কখনো শেষ হয় না। হা-হুতাশ করতে করতেই তার ইহকাল-শেষ হবে। তাই আমাদের ব্যবসায়ী ভাইদের উদ্দেশে বলতে চাই, সদ্ভাবে সত্য বলে ব্যবসা করুন। খালি চোখে এতে মুনাফা কম মনে হলেও আল্লাহ আপনাকে এত বরকত দেবেন যে, মিথ্যার অনেক উপার্জনের চেয়ে সুখে-শান্তিতে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন। আল্লাহ আমাদের সদ্ভাবে সত্য বলে ব্যবসা করার তাওফিক দিন এবং এ ব্যবসাকে আমাদের জান্নাতের অসিলা বানিয়ে দিন।

লেখক : খতিব, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কুর্মিটোলা, ঢাকা।

 

 

 

সর্বশেষ খবর