শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিনা অপরাধে শাস্তি

পুলিশ ও আইনজীবীদের সুমতি কাম্য

অপরাধ না করেও পুলিশ ও আইনজীবীর কথিত ভুলে বাবলু শেখ নামে এক নিরপরাধ শ্রমজীবীকে ১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। হাজত খাটতে হয়েছে দুই মাস। নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আইনজীবীরাও নিজেদের এ ক্ষেত্রে সোল এজেন্ট বা নিশানবরদার ভাবেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পুলিশ ও আইনজীবীদের একাংশ যে উল্টোপথে হাঁটেন সে মহাসত্যটি তুলে ধরেছে বাবলু শেখের জীবনের এক-তৃতীয়াংশ বিষময় করে তোলার ঘটনা। উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল নাটোর সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির মামলার আসামি শ্রীবাবুর পরিবর্তে সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের বাবলু শেখকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। বাবলু শেখের তৎকালীন আইনজীবী লুৎফর রহমান শ্রীবাবু নামেই তার মক্কেলের জামিন করান। সেই থেকে বাবলু শেখ হয়ে যান শ্রীবাবু। দুই দফায় দুই মাস কারাভোগের পর ১৮ বছর ধরে হতদরিদ্র বাবলু শেখ নিজের সঠিক পরিচয় জানাতে ঘুরে বেড়ান আদালতের বারান্দায়। সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের চা দোকানি বাবলু শেখের বেলায় ঘটেছে আলোচিত জাহালমের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়ে বাবলু শেখের ভোগান্তিকে বহুল আলোচিত জজ মিয়া ও জাহালমের প্রতিচ্ছবি বলে অভিহিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা শ্রীবাবু নামের এক আসামির বদলে বাবলু শেখকে গ্রেফতার করে দায়িত্বের চরম অবহেলা করেছেন বলে আদালতের পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করা হয়েছে। থানার ওসিও আসামিকে যাচাই না করে চালান বইয়ে স্বাক্ষর দিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন। আইনজীবীরা বাবলু শেখ যে শ্রীবাবু নন, তা জেনেও বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেননি, বরং ভুল নামেই মামলা পরিচালনা করেছেন। পেশাগত অসততার এটি একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। আদালত এ বিষয়ে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আইনজীবী সমিতিকে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ। আমাদের বিশ্বাস, আদালতের এ রায় বিপথগামী পুলিশ ও আইনজীবীদের সুমতি ফেরাতে সহায়তা করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর