শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জীবন হোক ওয়াদা রক্ষা আর হালাল কামাইয়ের

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

জীবন হোক ওয়াদা রক্ষা আর হালাল কামাইয়ের

মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো লেনদেনে স্বচ্ছ থাকা। মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হলো লেনদেনে অস্বচ্ছ থাকা। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে এমন বহু মানুষের দেখা মেলে যাদের মাঝে মুমিনিয়াতের সব বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও মুনাফিকের এই ঘৃণিত অভ্যাসও ভয়ঙ্করভাবে তাদের চরিত্রে মিশে আছে। দেখা যায় মসজিদের প্রথম কাতারের মুসল্লিও লেনদেনে স্বচ্ছতা রক্ষা করতে পারে না। স্বচ্ছতা রক্ষা দূরের কথা ন্যূনতম সৌজন্যবোধ দেখানোর প্রয়োজনীয়তাও এদের আচরণে থাকে না। আজকাল কাউকে টাকা ঋণ দেওয়াই যেন কাল হয়ে উঠেছে। সম্পর্ক তো নষ্ট হয়ই, উল্টো নানান ধরনের কথা শুনে নিজেকেই নিজে ধিক্কার দিয়ে তওবা করতে ইচ্ছা করে যে, এ জীবনে আর কাউকে টাকা ধার দেব না। কথা দিয়ে কথা না রাখা, যথাসময়ে আমানত ফিরিয়ে না দেওয়া ভয়াবহ গুনাহ। হাদিস থেকে জানা যায়, আপনি যতই দীনদার-পরহেজগার হোন, কপালে নামাজের যতই দাগ থাকুক, যদি আমানতের হেফাজত করতে না পারেন, যদি কারও সঙ্গে ওয়াদা দিয়ে রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে আপনার দীনই ঠিক থাকবে না, আমল তো অনেক পরের কথা। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বলতেন, ‘নিশ্চয়ই! যার আমানতদারিতার চর্চা নেই, তার ইমান নেই। যে ওয়াদা রক্ষা করে না তার কোনো ধর্মই নেই।’ মুসনাদে আহমাদ। গচ্ছিত অর্থ বা সম্পদ ফিরিয়ে না দেওয়াও এক ধরনের আত্মসাৎ। এটা নিঃসন্দেহে হারাম। অবৈধ রিজিকে পুষ্ট দেহ ও মস্তিষ্কের কোনো ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। শুধু তাই নয়, অবৈধ সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিলেও তা আল্লাহর কাছে গৃহীত হয় না। এ থেকেই বোঝা যায় আমানতের সম্পদ আত্মসাৎ, যথাযথভাবে ফিরিয়ে না দেওয়া কত বড় গুনাহ। মুসলিম ও তিরমিজির হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্রতা ছাড়া যেমন নামাজ কবুল করেন না তেমন পবিত্র রিজিক ছাড়া তিনি সদকাও গ্রহণ করেন না।’ মুসলিম, তিরমিজি। যারা অন্যের আমানতের হেফাজত করে না, অন্যকে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করে না তারা কিন্তু ঠিকই নিজের বেলায় আমানত এবং ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে সজাগ-সতর্ক থাকে। এমনও হয়, তার কাছে হাজারো মানুষ টাকা পাবে, কিন্তু সে যার কাছে টাকা পাবে জবরদস্তি করে সে টাকা আদায় করে নেয় ঠিকই কিন্তু নিজের দেনা পরিশোধ করে না। এদের ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আল্লাহ বলছেন, ‘সীমাহীন দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা অন্যায়ভাবে পরিমাপ করে। মানুষের কাছ থেকে নিজের পাওনা পুরোপুরি আদায় করে কিন্তু মানুষকে তাদের পাওনা খুব কমই বুঝিয়ে দেয়। তারা কি ভাবে না, এক কঠিন দিনে মৃত্যুর পর আবার তাদের জীবিত করা হবে। সেদিন সবাইকে মহান প্রতিপালক আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তার পার্থিব জীবনের প্রতিটি কাজ ও লেনদেনের হিসাব দিতে হবে।’ সূরা মুতাফফিফিন, আয়াত ১-৬। হে আল্লাহ! আমাদের ওয়াদা রক্ষা করার মনমানসিকতা দান করুন। আমরা যেন এ জীবন ওয়াদা রক্ষা করে হালাল কামাই খেয়ে পার করতে পারি।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন।

সর্বশেষ খবর