সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চুপ থাকলে গুনাহ থেকে বাঁচা যায়

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

চুপ থাকলে গুনাহ থেকে বাঁচা যায়

আজকের পৃথিবীতে মানুষে মানুষে যত ঝগড়া-ঝাটি হয়, মনোমালিন্য হয় এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়  তার মূলে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত কথা এবং বাকশক্তির অপব্যবহার। অথচ জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করলে এবং চুপ থাকলে অনেক অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা যায়। বেশির ভাগ সময় চুপ থাকা নবী-রসুলদের অভ্যাস ছিল। হজরত ইমরান ইবনে হিত্তান (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা আমি আবু যর গিফারী (রা.)-এর কাছে এসে তাকে একখানা কালো চাদর জড়ানো অবস্থায় মসজিদের মধ্যে একাকী দেখতে পেলাম। তাকে দেখে আমি বললাম, এভাবে একাকী অবস্থান করা কীরূপ? তিনি বললেন, আমি শুনেছি, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, অসৎ সঙ্গের তুলনায় একাকী থাকা বহু উত্তম এবং একাকী থাকা অপেক্ষা সৎসঙ্গ বহু উত্তম। নীরব থাকার তুলনায় উত্তম বাক্য শিক্ষাদান করা উত্তম। আর কুবাক্য শিক্ষা দেওয়া থেকে নিশ্চুপ থাকা উত্তম। অপর হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তির নীরব অবস্থায় থাকা ষাট বছরের নফল ইবাদত হতেও উত্তম। বায়হাকি শরিফ। আরেকটি হাদিসে চুপ থাকার উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু যর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলে তিনি দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করলেন। হাদিস বর্ণনা শেষে আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে (মনে) আল্লাহ্কে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছি। কেননা তা তোমার যাবতীয় কাজকে সুন্দর করে দেবে। আমি বললাম, আরও কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, কোরআন পাঠ কর এবং মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর জিকিরকে তোমার জন্য বাধ্যতামূলক করে নিও। তা তোমার জন্য আসমানে স্মরণযোগ্য এবং জমিনে অর্থাৎ দুনিয়ায় আলোস্বরূপ হবে। আমি আবার বললাম, আরও কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, বেশি সময় নীরব থাক। কেননা তা শয়তানকে দূরে সরিয়ে রাখবে এবং ধর্মীয় কাজে তোমার সহায়তাকারী হবে। আমি বললাম, আরও কিছু বলুন। তিনি বললেন, বেশি হাসবে না। কেননা তা অন্তরকে মেরে ফেলে এবং চেহারার নূর দূর করে। আমি বললাম, আরও কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, উচিত কথা বল, তা যদিও বা তিক্ত হয়। আমি বললাম, আরও কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর পথে কাজ করতে কোনো নিন্দাকারীর নিন্দাকে পরোয়া কর না। আমি বললাম, আরও কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, তোমার জানা নিজের মধ্যকার দোষ-ত্রুটিগুলো যেন তোমাকে অন্য লোকের দোষত্রুটি প্রচার করতে বিরত রাখে। আরেকটি হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেছেন, হে আবু যর! আমি কি তোমাকে এমন দুটি স্বভাবের কথা বলে দেব না, যা বহন করা অনায়াসযোগ্য হলেও পরিমাপের পাল্লায় অধিক ভারী? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, স্বভাব দুটি হলো, নীরবতা এবং সচ্চরিত্রতা। কসম সে সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ। মানুষের এ দুটি স্বভাবের মতো উত্তম আর কোনো স্বভাব নেই।  বায়হাকি শরিফ।

লেখক : খতিব, সমিতিবাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর