মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোলার বিয়োগান্ত ঘটনা

সম্প্রীতি নষ্টের অপচেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক

কান চিলে নিয়েছেÑ এমন গুজবে কানে হাত দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার বদলে চিলের পেছনে ছোটাছুটি করার মতো নির্বোধের সংখ্যা এ দেশে কম নয়। এমন নির্বুদ্ধিতা যে কখনো কখনো বিপুলসংখ্যক লোকের হতাহতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে ভোলার বিয়োগান্ত ঘটনা তারই প্রমাণ। ইসলাম ও মহানবী (সা.) সম্পর্কে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য প্রচারের দায়ে ভোলায় ফুঁসে ওঠে ধর্মপ্রাণ মানুষ। বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামে এক ব্যক্তি ১৮ অক্টোবর তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার অভিযোগ এনে বোরহানউদ্দিন থানায় রাত ৮টা ৫ মিনিটে জিডি করেন। জিডি করার সময় থানায় অবস্থানকালেই তার নম্বরে একটি কল আসে এবং তার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ তিনি ওসিকে জানান। ওসি বিষয়টি ভোলার পুলিশ সুপারকে জানান। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সেদিন রাতের মধ্যেই বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্যের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাককারী ও তার মোবাইলে কলকারী শরীফ ও ইমন নামে দুই যুবককে আটক করে পুলিশ। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বোরহানউদ্দিন থানায় আনা হয়। সকালে ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর অবমাননার প্রতিবাদে তৌহিদি জনতার ব্যানারে ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ হয়। মোনাজাতের মাধ্যমে সমাবেশ শেষ হয় এবং মোনাজাত পরিচালনাকারী স্থানীয় এক পীর সাহেব কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন এবং জড়ো হওয়া মুসল্লিদের শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় গুজব রটে যায় পুলিশ পীর সাহেবকে গ্রেফতার করেছে। এ গুজবের প্রক্রিয়ায় লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হলে চারজনের মৃত্যু ও শতাধিক আহত হয়। মহানবী (সা.) কিংবা ইসলামের অবমাননা নিঃসন্দেহে অনুসারীদের কাছে স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু ঘটনার উৎস না জেনে ভোলায় একদল লোক যেভাবে অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এই কা-জ্ঞানহীন আচরণে শতাধিক মানুষের হতাহতের ঘটনা মর্মান্তিক ও অনাকাক্সিক্ষত। আমরা ভোলার অসহিষ্ণু ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করতে চাই। মহলবিশেষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম নষ্টে এবং হানাহানি সৃষ্টির অসদুদ্দেশ্যে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়েছিল কিনা তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। এই জঘন্য কর্মকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও কাম্য।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর