শালীনতা মুমিন চরিত্রের জন্য অপরিহার্য।  এটি একটি মহান মানবিক গুণ। ইসলাম প্রতিটি মানুষকে এই গুণে গুণান্বিত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। শালীনতা মানুষকে মহত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার শক্তি জোগায়। অহংবোধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়। দম্ভ প্রকাশের হঠকারী পথ থেকে মানুষকে দূরে রাখে। আল কোরআনে আল্লাহ হজরত লোকমান (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে শালীনতা শিক্ষা দিতে গিয়ে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। হজরত লোকমান পুত্রকে বলেন, ‘হে পুত্র! অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না। পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যভাবে চোলো না, কারণ আল্লাহ কোনো উদ্ধত-অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তুমি পদচারণ করবে সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করবে। নিশ্চয়ই স্বরের মধ্যে গাধার স্বর সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ সূরা লোকমান, আয়াত ১৯। তাহজিব বা শালীনতার গুণে নিজেকে গুণান্বিত করতে হলে আমাদের অহংবোধ বিসর্জন দিতে হবে। দম্ভ প্রকাশের ভ্রান্তি থেকে দূরে থাকতে হবে। মানুষের মনঃকষ্টের কারণ ঘটায় এমন সব অপ্রীতিকর আচরণ বর্জন করতে হবে। কথাবার্তায় হতে হবে সংযত। পোশাক-পরিচ্ছদেও শালীন হতে হবে। আল কোরআনে মানুষকে যেমন শালীনতা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তেমন হাদিসে অশালীনতা থেকে দূরে থাকা ও অশালীন হওয়ার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর নবীর একটি বাণী স্মরণ করা যায়। তিনি বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহতায়ালা অশালীন ও দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন।’ তিরমিজি।

আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের হাপরে ফুঁ দানকারীর মতো। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু দিয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু কিনবে অথবা তার সুঘ্রাণ তুমি পাবে। আর কামারের হাপরে ফুঁ দানকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবে নতুবা তার দুর্গন্ধ তুমি পাবেই।’ যার মধ্যে শালীনতাবোধ নেই, যার আচরণ অন্য মানুষকে আহত করে, যার অভদ্র আচরণে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করে, মানুষ যার কাছ থেকে দূরে থাকাকে নিরাপদ মনে করে তারা নিঃসন্দেহে অভিশপ্ত। এ ধরনের অপগুণের অধিকারীদের সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার অশালীন আচরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ তাকে পরিত্যাগ করে।’ বুখারি। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমাদের তাহজিব বা শালীনতার গুণে নিজেদের গুণান্বিত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সে তাওফিক দান করুন।