রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

গৃহকর্মী হত্যা

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কাম্য

গৃহকর্ত্রী রোকসানা পারভিন কোনো ডাইনি নন, বরং সুশিক্ষিতা একজন মহিলা। তবে ১২ বছরের গৃহকর্মী জান্নাতিকে পিটিয়ে হত্যার ক্ষেত্রে তিনি যে নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছেন তা কল্পকথার ডাইনিদের হার মানায়। শরীরে ভীষণ জ্বর নিয়ে গত মঙ্গলবার গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের ভয়ে চিলেকোঠায় পালিয়ে ছিল জান্নাতি। তাকে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসেন পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদ আহমেদের বেগম সাহেবা রোকসানা পারভিন। ছোট্ট শিশু গৃহকর্মীর ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলে নির্দয় প্রহারের তা-ব। মারধরের কারণে নির্জীব হয়ে পড়লে তাকে দুই ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় রান্নাঘরে। পরে জ্ঞান না ফেরায় বেগতিক অবস্থা দেখে রোকসানা ও সাইদ আহমেদ জান্নাতিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে জান্নাতি চলে গেছে না-ফেরার দেশে। রোকসানাকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশসূত্রে বলা হয়েছে, সাইদ আহমেদ একসময় বগুড়ায় চাকরিরত ছিলেন। জান্নাতির বাড়ি বগুড়ার গাবতলী। চার বছর আগে জান্নাতি সাইদের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয়। এরপর সাইদের পরিবারের সঙ্গে জান্নাতিও ঢাকায় চলে আসে। সাইদ আহমেদ পরিবার নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে স্যার সৈয়দ রোডের একটি ছয় তলা ভবনের নিচতলার নিজস্ব ফ্ল্যাটে থাকেন। এ দম্পতির সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া একটি ছেলে রয়েছে। গত রবিবার থেকে সাইদ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ওই বাসায় জান্নাতি ছাড়া আরও দুজন গৃহকর্মী কাজ করেন। ঢাকায় আসার পর প্রায়ই সামান্য বিষয়ে জান্নাতির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতেন রোকসানা; যার স্পষ্ট ছাপ ছিল জান্নাতির নিথর দেহে। লাশের পা থেকে মাথা পর্যন্ত অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন সাক্ষ্য দেয় জান্নাতি কী ধরনের ডাইনির কবলে পড়েছিল। পুলিশ জান্নাতি হত্যা মামলায় গৃহকর্ত্রী রোকসানাকে গ্রেফতার করলেও তার স্বামী এখনো পলাতক। এ ঘটনা সারা দেশের জনমনে ইতিমধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃণার সৃষ্টি করেছে। গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতনের এমন ঘটনা রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায়ই ঘটছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নামের আলাদিনের চেরাগরূপী প্রতিষ্ঠানের যিনি নির্বাহী কর্মকর্তা তার আর্থিক দাপট যে কারোরই জানা থাকার কথা। জান্নাতি হত্যার বিচার এড়াতে সে ক্ষমতা যাতে থাবা বিস্তার করতে না পারে- আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর