মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চাঁদের চেয়ে সুন্দর তিনি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

চাঁদের চেয়ে সুন্দর তিনি

হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘ জীবনে রসুলের চেয়ে সুন্দর আর কাউকে দেখিনি।’ বুখারি ও মুসলিম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বর্ণনায় আছে- ‘কাউকে এমন সুন্দর দেখিনি।’ এর ব্যাখ্যায় শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ তো বটেই, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুরানি চেহারার সঙ্গে অন্য কিছুর সৌন্দর্যের তুলনা হতে পারে না। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য তাঁর নুরের কাছে ম্লান হয়ে যায়।’ মাদারেজুন নবুয়াত। বুখারির বর্ণনায় এসেছে, ‘বারা ইবনে আজিব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার উজ্জ্বলতার সঙ্গে কি তরবারির চিকচিক আলোর তুলনা করা যেতে পারে? উত্তরে তিনি বললেন, না। তবে তাঁর চেহারার নুরের সঙ্গে পূর্ণিমার আলোর তুলনা হতে পারে। পার্থক্য হলো, পূর্ণিমার আলোর চেয়ে তাঁর চেহারা বেশি উজ্জ্বল।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা তরবারির সঙ্গে তুলনা না করার প্রথম কারণ হলো, তরবারির মাঝে এক ধরনের হিংস্রতা ও ধারালো ভাব আছে, আর তাঁর চেহারায় আছে কোমলতা এবং মায়াবী ভাব, যা চাঁদের মধ্যে আছে। আরেকটি কারণ হলো, তরবারি গোল নয়, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা গোল, অবিকল চাঁদের মতো।’ মুসলিমের বর্ণনায় বারা ইবনে আজিব রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারার আকৃতি বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, ‘তাঁর চেহারা চাঁদ ও সূর্যের মতো গোল।’ বুখারি ও মুসলিম। নবীজির চেহারার বর্ণনা নবীজি নিজে এভাবে দিয়েছেন, ‘আমি লাবণ্যময়, আর আমার ভাই ইউসুফ উজ্জ্বল।’ সিরাত বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘উজ্জ্বল চেহারার চেয়ে লাবণ্যময় চেহারার আকর্ষণ বেশি।’ তবে সিরাতবিদরা এও বলেছেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা হুবহু চাঁদের মতো গোল নয়। বরং চিবুকের দিক থেকে কিছুটা লম্বাটে। এক কথায় তাঁর চেহারা লম্বা ছিল না। আবার পুরোপুরি গোলও ছিল না। এর মাঝামাঝি ছিল; যা দূর থেকে দেখলে গোলাকার মনে হতো।’ মাদারেজুন নবুয়ত। শাহ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) লেখেন, কোনো কোনো সিরাত বিশেষজ্ঞ সাহাবিদের থেকে বর্ণনা করেছেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা একফালি চাঁদের মতো ছিল। যেমন বিখ্যাত সাহাবি কবি কাব বিন মালিক (রা.) তাঁর কবিতায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারাকে একফালি চাঁদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কেউ যদি একদিক থেকে দেখত তাহলে মনে হতো সে যেন একফালি চাঁদ দেখছে। এ হিসেবে তাঁর সৌন্দর্যের সঙ্গে একফালি চাঁদের তুলনা হতে পারে। বারা ইবনে আজিব বলেন, ‘রসুলুল্লাহর কপালে যখন ভাঁজ পড়ত তখন মনে হতো একফালি চাঁদ তাঁর কপালে ভাসছে।’ বুখারি। হজরত আবুবকর (রা.) বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবীর চেহারা চাঁদের মতো উজ্জ্বল ছিল। চাঁদের আলো যেমন মনকে শীতল করে, হৃদয়ে প্রেম জাগায় তেমনি হজরতের দিদারও আমাদের মনে প্রশান্তি আনত এবং প্রেমের জোয়ার বইয়ে দিত।’ নেহায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাসতেন, তাঁর চেহারা এত বেশি উজ্জ্বল হতো যে, আশপাশে কোনো কাচ থাকলে তা চিকচিক করত।’ মাওয়াহিবে লাদুনিয়া। 

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর