মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অযোধ্যা বিরোধ

সমঝোতার পক্ষে রায়

বাবরি মসজিদ আর রাম জন্মভূমি নিয়ে সৃষ্ট মামলার রায় ঘোষণা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ অযোধ্যার আলোচিত জমিতে মন্দির স্থাপনের রায় দিয়েছে। একটি ট্রাস্ট মন্দির প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবে। মসজিদ বানানোর জন্য সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডকে অযোধ্যার মধ্যস্থলে ৫ একর জমি প্রদানে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রায় প্রদানকালে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুযায়ী ফাঁকা জায়গায় বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়নি। তবে মাটির নিচে থাকা স্থাপনাটি মসজিদ ছিল নাকি মন্দির, তা সুনির্দিষ্ট করে তারা বলতে পারেনি। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এই স্থান রামের জন্মভূমি। তবে কারও বিশ্বাস অন্যের অধিকার হরণ করবে তা বাঞ্ছনীয় নয়। বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে যেহেতু জমির মালিকানা ঠিক করা সম্ভব নয়, তাই আইনের ভিত্তিতেই জমির মালিকানা ঠিক করা উচিত। আপাতত কেন্দ্রীয় সরকার ওই জমির মালিকানা পাবে। কেন্দ্রকে তিন মাসের মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্ট গঠন করে তাদের হাতে জমি তুলে দিতে হবে। ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে মন্দির নির্মাণ হবে। সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড ওই জমিতে অধিকার দাবি করতে পারবে না। অযোধ্যার মধ্যস্থলে কোথাও তাদের ৫ একর জমি দেওয়া হবে মসজিদ নির্মাণের জন্য। স্মর্তব্য, রামের কথিত জন্মস্থানে মন্দির ভেঙে মসজিদ গড়া হয়েছিল- এমন কাল্পনিক দাবি তুলে সেখানে রাম মন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্যে অসহিষ্ণু জঙ্গিবাদী হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নামের একটি গোঁড়া সংগঠন এই জঘন্য কর্মকান্ডে নেতৃত্বে দেয়। তাদের পেছনে মতলববাজ একাধিক রাজনৈতিক সংগঠনের সমর্থন ছিল। আদালত তাদের রায়ে বলেছে, বাবরি মসজিদ ভাঙার মাধ্যমে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। মামলার অন্যতম পক্ষ এবং মসজিদ ভাঙার কর্মকান্ডে জড়িত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণে কোনো কর্তৃত্ব খাটাতে পারবে না। ভারতবর্ষে মোগল শাসনের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের আমলে নির্মিত মসজিদটি ১৯৯২ সালে গুঁড়িয়ে দেয় বিভেদকামী শক্তির অনুচররা। এ নিয়ে সৃষ্ট দাঙ্গায় ৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। আদালত বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে অন্যায় হিসেবে চিহ্নিত করে সংঘাতের বদলে সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টিকে গুরুত্ব দিয়েছে, যা অভিনন্দনযোগ্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর