বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবারও ট্রেন দুর্ঘটনা

দোষীদের কঠিন শাস্তি দিন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা শতাধিক। তাদের অনেকের অবস্থাই গুরুতর। সিগন্যাল না মেনে ভুল লাইনে চলে যাওয়ায় সোমবার রাতের এই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীদের জীবন জিম্মি রেখে আন্তনগর তূর্ণা নিশীথার ট্রেন চালক হয়তো ঘুমিয়ে ছিলেন অথবা খোশগল্পে মেতে ছিলেন। সিগন্যাল অমান্য করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনে পৌঁছাতেই উদয়ন এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক যাত্রীর হতাহতের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে হতাহতের সবাই উদয়নের যাত্রী। ঘটনার পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-সিলেট রেলপথে সব ধরনের ট্রেন চলাচল ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আখাউড়া ও লাকসাম থেকে রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধারকাজ চালায়। সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, স্কাউটসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যুব রেড ক্রিসেন্ট, পিস ভিশন ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা রক্ত প্রদান করে। স্মর্তব্য, রেল-সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও দায়বোধের অসচেতনতায় ট্রেন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। দুর্ঘটনা ঘটলেই তদন্ত কমিটি হয়, তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে দেওয়া সুপারিশের কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হয় না, সমাধান হয় না ত্রুটি-বিচ্যুতির। ফলে অভিন্ন সমস্যায় দুর্ঘটনা বেড়েই চলে জ্যামিতিক হারে। রেলওয়ের প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের সাময়িক বরখাস্ত কিংবা তিরস্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সারা দুনিয়ায় রেলপথের ভ্রমণকে সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে ভাবা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরব্য উপন্যাসের বাগদাদের চোরদের কাছে জিম্মি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রেলওয়ের লুটেরা ও চোরদের বিরুদ্ধে যেমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে তেমন যোগ্য ও নিষ্ঠাবান কর্মীদের নিয়োগের বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর