বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করেছে পুলিশ। অভিযুক্তরা সবাই বুয়েট ছাত্র, সংগত কারণেই মেধাবী। ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার নেতা-কর্মী তারা। আবরার হত্যার মাত্র ৩৭ দিন পর দেশের ইতিহাসের অন্যতম চাঞ্চল্যকর এই পৈশাচিক হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হলো। শুধু দ্রুত চার্জশিট দাখিল নয়, ১৩৫ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে আদালত-সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। ফেসবুকে ভিন্নমত পোষণের দায়ে আবরারকে তার রুম থেকে ধরে এনে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নামধারী দুর্বৃত্তরা। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ৬ অক্টোবর রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত আবরারকে পেটানো হয়। ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ডাক্তার তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। অভিযুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ১১ জন আবরার হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। উপস্থিত থাকা এবং অন্যভাবে সম্পৃক্ততার কারণে বাকি ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ছাত্রশিবিরের সদস্য বলে সন্দেহের বিষয়টি আবরারের ওপর নির্যাতনের একমাত্র কারণ নয়, বরং একটি কারণ। আসলে বুয়েট ছাত্রলীগের ওই নেতা-কর্মীরা অন্যদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। চার্জশিটে ২৫ আসামির প্রত্যেকের ছাত্রলীগের পদ উল্লেখসহ রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ চার্জশিটকে ‘নির্ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন। অভিযোগপত্রে মোট ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ জন ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন বাদীপক্ষের ছয়, বুয়েট শিক্ষক সাত, বুয়েট ছাত্র ১৩ ও বুয়েটের কর্মচারী পাঁচজন। স্মর্তব্য, আবরার ফাহাদ হত্যার পর তার হতভাগা বাবা ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তদন্তে আরও ছয়জনের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়। হত্যাকা-ের তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। ইচ্ছা করলে যে তারা দ্রুত তদন্ত করতে পারে এবং অপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সক্ষমতা দেখাতে পারে, এ মামলার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করব, এ হত্যা মামলায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে। যে নষ্ট রাজনীতি বুয়েটের মেধাবী ছাত্রদেরও হায়েনায় রূপান্তরিত করেছে, তার থাবা ভেঙে ফেলতে এ মামলা জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিতে অবদান রাখবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।