শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুহাম্মদ (সা.)-এর মোজেজা

মুফতি ওলিউল্লাহ পাটোয়ারী

মুহাম্মদ (সা.)-এর মোজেজা

মুজাহিদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু হুরায়রা (রা.) বলতেন, ‘আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোনো (হক) ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনো পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদা আমি তাঁদের (রসুলুল্লাহ ও সাহাবিদের) রাস্তায় বসে ছিলাম, যেখান দিয়ে তাঁরা বের হতেন। আবু বকর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কোরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কোরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। অতঃপর আবুল কাসেম [অর্থাৎ রসুলুল্লাহ] আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, তুমি আমার সঙ্গে চল। অতঃপর তিনি চললেন, আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়িতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুধ কোথা থেকে এসেছে? বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা আপনার জন্য হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছে। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাজির হে আল্লাহর রসুল! তিনি বললেন, আহলে সুফফার লোকদের গিয়ে এখানে ডেকে আনো। [রাবি বলেন, আহলে সুফফা ছিল ইসলামের মেহমান। তাঁদের পরিবার-পরিজন, ধনসম্পদ কিছুই ছিল না। আর এমন কেউ ছিল না যার ওপর ভরসা করা যায়। যখন কোনো সদকার মাল রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসত তখন তিনি তাঁদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোনো হাদিয়া (উপঢৌকন) আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ তাঁদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাঁদের শরিক করতেন এবং নিজে অংশগ্রহণ করতেন।] (আবু হুরায়রা বলেন) রসুলুল্লাহর আদেশ শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা আহলে সুফফার কী হবে! আমিই এ দুধ পানের বেশি হকদার। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার কোনো গত্যন্তর ছিল না। সুতরাং আমি আহলে সুফফার কাছে গিয়ে তাঁদের ডেকে আনলাম। তাঁরা এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তিনি তাঁদের অনুমতি দিলেন। তাঁরা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। রসুলুল্লাহ বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাজির হে আল্লাহর রসুল! তিনি আমাকে বললেন, এটি তাঁদের দাও। আমি (দুধের) পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, সে পান করে পরিতৃপ্ত হলো এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিল। অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, সেও তৃপ্তিসহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিল। তৃতীয় জনকে দিলে সেও তাই করল। এভাবে আমি (সর্বশেষে) রসুলুল্লাহর কাছে পৌঁছলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হলো। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাজির হে আল্লাহর রসুল! তিনি বললেন, এখন আমি আর তুমি বাকি। আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহর রসুল। তিনি বললেন, বসে পড় এবং পান কর। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, পান কর। আমি পান করলাম। তিনি এ কথা বলতেই থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হলাম, আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই। তিনি বললেন, তাহলে আমাকে দাও। আমি তাঁকে দিলে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকি দুধ পান করলেন।’ বুখারির ‘রিকাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৭, মিশকাতের ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়, ‘অনুমতি’ অনুচ্ছেদ।

হলেখক : খতিব, বায়তুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, দক্ষিণ পীরেরবাগ অলি মার্কেট, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর