রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাদক ও নেশাদ্রব্য

মেরাজুল ইসলাম

মাদক, যার আরবি শব্দ সাকার। অর্থ নেশা, মদ, নেশার বস্তু, মাদকদ্রব্য। পরিভাষায় মাদক বলা হয় যা পান কিংবা নেশা করলে মাতলামি ভাব প্রকাশ পায়, বিবেক লোপ পায়। মাদক এমন এক বস্তু যা ব্যক্তি নয়, পরিবার নয়; গোটা সমাজকে ধ্বংস করে। মাদক এক মরণ ব্যাধির নাম। ইসলামের প্রথম যুগে মদজাতীয় মাদকদ্রব্য যদিও অনুমোদন ছিল, কিন্তু মানুষের ক্ষতির দিকগুলো বিবেচনা করে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একেবারে নিষিদ্ধ। যেমন আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্যনির্ধারক তীর এসব শয়তানের নোংরা কাজ ছাড়া কিছুই নয়। তোমরা এগুলো থেকে বেঁচে থাকো (কেন বাঁচবা জানো?), যাতে তোমরা সফলতাপ্রাপ্ত হও।’ সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৯০। মদ, জুয়া, তামাক, নেশাজাতীয় সব দ্রব্যই মানুষের বাঁচার সব উপকরণ নীল করে দেয়। ধ্বংস করে দেয়। মাদক একজনকে গ্রাস করার দ্বারা গোটা রাষ্ট্রকে গ্রাস করে, কারণ, একজন ব্যক্তির সঙ্গে একটি পরিবার জড়িত, একটি পরিবারের সঙ্গে একটি সমাজ জড়িত, একটি সমাজের সঙ্গে একটি রাষ্ট্র জড়িত। তার মানে প্রত্যেক মানুষের একেকটা জীবন একেকটা রাষ্ট্র। একেকটা জীবন মাদকে গ্রাস হওয়া মানে রাষ্ট্র গ্রাস হওয়া। তাহলে রাষ্ট্রের কেমন সচেতন হওয়া উচিত? এসব মাদক সেবন করার দ্বারা সমাজে অশান্তির বিকাশ ঘটে, পরস্পরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃজন হয়। বিশেষ করে জুয়া খেলা দেখুন। আল্লাহ কোরআনে মদ ও জুয়ার কথা একসঙ্গেই উল্লেøখ করেছেন এবং মদের কথা আগে বলেছেন, কেন? কারণ, জুয়া খেলার মধ্যে মদ মানুষকে আনন্দ দেয়। জুয়ার নেশা আরও বাড়িয়ে তোলে। এজন্য আল্লাহ খমরকে (মদকে) মাইসির (জুয়া) আগে উল্লেখ করেছেন এবং মদ ও জুয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, এগুলো মানুষের ক্ষতি ছাড়া কিছুই নয়। বিশেষ করে মদ, জুয়া, মাদকজাতীয় সব দ্রব্য মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর স্মরণ থেকে বিরত রাখে। যেমন আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং  আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে (বল) তোমরা এখনো কি নিবৃত্ত হবে?’ সূরা মায়েদাহ, আয়াত ৯১। মাদক সেবনে বর্তমান সমাজ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিশেষ করে সমাজের যুবক শ্রেণি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, স্কুলপড়ুয়া সোনার কিশোররা কীভাবে মাদকের নেশায় ডুবছে অথচ এরা আমাদের ভবিষ্যৎ। মাদক সমাজে অপকর্মের জন্ম দেয়। অশ্লীলতার জন্ম দেয়। মিথ্যার জন্ম দেয়। বাঁচার উপকরণের যন্ত্রগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। বিবেক লোপ পায়। শরীরের সর্বাঙ্গ স্ব স্ব ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অল্প বয়সেই মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে। ইমান দূরীভূত হয়। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘শরাব (মদ জাতীয় মাদক) ও ইমান একত্রিত হতে পারে না।’ নাসায়ি। সংসারে কিংবা সমাজে অভাব দেখা দেয়। সমাজে চুরি, ডাকাতি বা ছিনতাই বেড়ে যায়। ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদজাতীয় মাদকদ্রব্য সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করেছেন এবং মদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এমন ১০ শ্রেণির ওপর লানত করেছেন। এক. যে লোক নির্যাস বের করে দুই. প্রস্তুতকারক তিন. পানকারী চার. যে পান করায় পাঁচ. আমদানিকারক ছয়. যার জন্য আমদানি করা হয় সাত. বিক্রেতা আট. ক্রেতা নয়. সরবরাহকারী দশ. এর লভ্যাংশ ভোগকারী।’ তিরমিজি, মাআরেফুল কোরআন। পরিবার ও সমাজকে সুন্দর ও সুস্থ রাখতে হলে মাদকের শাস্তিস্বরূপ সংসদে আইন পাস অপরিহার্য এবং মাদকের হোতাদের জনসম্মুখে কঠিন শাস্তির বিকল্প নেই।

লেখক : পরিচালক, মাদ্রাসাতু ইক্রা ও হাফসা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা, মৌচাক, গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর