রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদেশে নারী কর্মী প্রেরণ

ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোয় অবশ্যই নয়

বাংলাদেশের নারীরা শুধু সংসারের কাজকর্মই করেন না, দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকের সিংহভাগই নারী। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি প্রধান খাত জনশক্তি রপ্তানি। গত কয়েক বছরে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে নারী কর্মীরাও অংশ নিচ্ছেন। সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন হাজার হাজার বাংলাদেশি নারী। তবে বিসংবাদের শুরু সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় নারী শ্রমিক রপ্তানিকে কেন্দ্র করে। ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ পাড়ি দিলেও নারী শ্রমিকের অনেকে দেশে ফিরছেন লাশ হয়ে। যেসব নারী কোনোরকমে মালিকের অত্যাচার থেকে পালিয়ে দেশে ফিরে আসছেন তাদের শরীরেও নির্যাতনের ছাপ স্পষ্ট। দেশে ফিরে এসব শ্রমিকের কেউ কেউ তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুললেও লজ্জায় মুখ বন্ধ রাখেন অনেকেই। চলতি বছরের ১০ মাসে নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে ৯৫০ জন নারী শ্রমিক সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন। আবার এ বছরেরই প্রথম ১০ মাসে দেশে ফিরেছে ১১৯ নারী শ্রমিকের লাশ। বিদেশে নারী কর্মীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সামনে বারবার তুলে ধরা হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় সম্প্রতি জাতীয় সংসদেও বিদেশে নারী শ্রমিকদের না পাঠানোর জোর দাবি উঠেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোও বিষয়টি নিয়ে এখন বেশ চিন্তিত। বিদেশে কাজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি নারী শ্রমিকের তিন ভাগের এক ভাগই যান সৌদি আরবে। এ ছাড়া তারা জর্ডান, ওমান, কাতারসহ বেশ কয়েকটি দেশে কাজ করতে যান। যৌন হয়রানি, হত্যা ও নির্যাতনের যত অভিযোগ সব মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ঘিরে। জাতীয় সংসদে বিদেশে নারী শ্রমিক না পাঠানোর যে দাবি উঠেছে তা খুবই প্রাসঙ্গিক। তবে আমরা নীতিগতভাবে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিরোধী। আজকের এই যুগে পুরুষ হোক নারী হোক, সবারই বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্মুক্ত রাখা উচিত। তবে নারী শ্রমিক প্রেরণের ক্ষেত্রে সভ্য দেশগুলো বেছে নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এড়াতে হবে। নারীর প্রতি যাদের সম্মান নেই, মানবিকতা সম্পর্কে যাদের বোধশক্তি ভোঁতা, সেসব দেশে নারী শ্রমিক প্রেরণ আর তাদের গিলেটিনে আবদ্ধ করার মধ্যে যে পার্থক্য নেই সে সত্যটি বুঝতে হবে।

সর্বশেষ খবর