শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নৈতিকতাবোধ কেন হারিয়ে যাচ্ছে

আমসা-আ আমিন

নৈতিকতাবোধ কেন হারিয়ে যাচ্ছে

স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত হতে যাচ্ছে। সময়টি সুদীর্ঘ নয়। আবার খুব কমও নয়। কারণ এই সময়ের মধ্যেই দুরূহ সমস্যাকবলিত দরিদ্র এশিয়ার অনেক দেশে চমকপ্রদ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক উত্তরণ ঘটেছে। তারা তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে বা পৌঁছে যাচ্ছে। উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদেরও বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতির সুফল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পায়নি। নব্যসামন্ততান্ত্রিক সমাজ-চরিত্রের উত্তরণ ঘটেনি। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সমাজচিন্তাবিদ ড. রেহমান সোবহানের মতে, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় সবার জন্য সমতাভিত্তিক যে সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি ছিল, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরোলেও বাংলাদেশের নিরন্তর মুক্তির সংগ্রাম এখনো চলছে।’ অনেকেই একমত পোষণ করবেন যে, প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্জন হয়নি। শুধু অবকাঠামো নয়, প্রবৃদ্ধি নয়, সূচক নয়, ধনী-গরিবের শতকরা হিসাব নয়; ভাবতে হবে সাধারণ মানুষের জীবনমান নিয়ে সবার সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিয়ে। ভাবতে হবে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের স্বপ্নগুলো নিয়ে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের চরম আত্মত্যাগ নিয়ে। তাদের স্মরণে আমরা অনেক অনেক আনুষ্ঠানিকতা করি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, জাতি গঠনে তাদের মহান স্বপ্নগুলো কেন আমরা পূরণ করতে পারছি না? আমাদের নৈতিকতাবোধ কেন হারিয়ে যাচ্ছে? কেন দেশপ্রেম হারিয়ে যাচ্ছে? কেন ন্যায্য সমাজ গড়ে উঠছে না? কেন সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত? কারণ খুঁজতে গেলে সমাজব্যবস্থা ও রাজনীতির প্রশ্ন এসেই যায়। বলা যায় যে, আমরা সমাজ ও রাজনীতিকে একরকম নব্যসামন্ততান্ত্রিক ধারা থেকে বের করে আনতে পারিনি, সমাজ-চরিত্রের নৈতিক ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে পারিনি। আজ এসব প্রশ্নের উত্তর বের করা, সমস্যাগুলোর শিকড় চিহ্নিত করা, এগুলো কেন বেড়েই চলেছে তা বোঝা এবং সমাধানের পথ খোঁজা একান্তভাবে প্রয়োজন। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

সমস্যাগুলোর বিষাক্ত শিকড় খোঁজা প্রয়োজন। সীমাহীন লোভ-লালসা ও ভোগ-বিলাস, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসা, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, অধঃপতন ও শূন্যতা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার অভাব দীর্ঘদিন ধরে জেঁকে বসে আছে। এসব শিকড় জন্ম দিচ্ছে নিত্যনতুন নৈতিক, মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অপরাধ। এসব অপরাধ ধ্বংস করছে সততা, নীতিনৈতিকতা ও মানবতাবোধ। শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ, আইনের শাসনের দুর্বলতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাড়িয়ে দিচ্ছে অপরাধপ্রবণতা, ছিঁড়ে ফেলছে মানবিক/সামাজিক বুনন। নিচের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নতুন কিছু নয়। নতুন হলো- গভীর উপলব্ধি সৃষ্টির জন্য, একটি গুরুতর উদ্যোগ সৃষ্টির জন্য এবং সমাধানের জন্য প্রেক্ষাপট স্পষ্ট করা।

সামাজিক অপরাধপ্রবণতা, নারী ও শিশুর প্রতি নৃশংসতা, কিশোর গ্যাং, ছাত্র হত্যা, ছাত্র-যুব রাজনীতির চরম দুর্বৃত্তায়ন, টর্চার সেল, নৃশংসতা/নিষ্ঠুরতা, ক্যাসিনো কালচার, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধোঁকাবাজি, মিথ্যাচার, অবিরাম সড়ক দুর্ঘটনা, নদী-জলাশয় দখল, শিক্ষায় দুরবস্থা, স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থা, প্রশ্নপত্র জালিয়াতি/ফাঁস, খাদ্যে ভেজাল, বৈষম্য, গুম-খুন-ধর্ষণ ও নিরাপত্তাহীনতার দৈনন্দিন ঘটনাবলি নৈতিক-মানবিক মূল্যবোধের ভয়াবহ অবক্ষয়ের প্রমাণ; মানবতা, মনুষ্যত্ববোধ ও দেশাত্মবোধ হারিয়ে যাওয়ার প্রমাণ। চোখের সামনে খুন হলেও কেউ এখন আর এগিয়ে আসতে চায় না; এ সত্য খুবই বেদনাদায়ক। নৈতিক জাগরণ, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া ব্যাপক অপরাধপ্রবণতা দূর করা যাবে না।

দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বেড়েই চলেছে, ঢুকে গেছে সব ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রের ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। চুরি-ঘুষ-দুর্নীতির অসম্ভব প্রসার ঘটেছে। আর্থিক ও ব্যাংক খাতে চলছে পুকুর নয়, সাগর চুরি। সমাজ, রাজনীতি, প্রশাসন, পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু বিবেচনায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল শেপার্স সার্ভে-২০১৬’ মতে, দুর্নীতি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। দুর্নীতির কারণে ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য বেড়েই চলেছে। আমরা মানসিকভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, আইনি-বেআইনি ইত্যাদির ভেদাভেদ জ্ঞান এবং আত্মমর্যাদাবোধ হারিয়ে ফেলছি। চলছে কপটতা, শঠতা ও মিথ্যাচারের জয়জয়কার। মানুষের মনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী ব্যক্তি-সততাবোধ, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং সততাই যে শ্রেষ্ঠ নীতি- এ ধারণা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। দুর্নীতিবাজরা যতই প্রভাবশালী হোক, সামান্যতম ছাড় পাবে না, তারা শাস্তি পাবেই, তাদের দুর্নীতিলব্ধ সম্পদ রাষ্ট্র ক্রোক করবেই- এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে দুর্নীতি শুধু দমন নয়, নির্মূল করাও সম্ভব।

মাদক এখন গুরুতর জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ ফলপ্রসূ হচ্ছে না। চুনোপুঁটি ক্রসফায়ার করে লাভ হচ্ছে না, কারণ রাঘববোয়ালরা ধরা পড়ছে না। ছাত্র-কিশোর-যুব সমাজের মধ্যে কার্যকর মাদকবিরোধী চেতনা সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। ফলে মাদকের সরবরাহ, বাজার ও আগ্রাসন বাড়বাড়ন্ত, এখন প্রায় দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে। কিশোর-তরুণ ছাত্র-যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। হয়তো আগামী দশকের মধ্যে মাদক-সিন্ডিকেট রাজনীতি-প্রশাসন-পুলিশ-বিচার ইত্যাদি ব্যবস্থার অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারে। এমনকি ‘নারকো টেররিজম’ শুরু হয়ে যেতে পারে। সমস্যাটি এতই গুরুতর। সমাধানের জন্য রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, পুলিশি, আইনি ও বিচারিক সহযোগিতার সৎ ও নৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টি করা প্রয়োজন। সীমান্তে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে, মাদকসম্রাটদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে, সমাজে মাদকবিরোধী শক্তিশালী চেতনা সৃষ্টি করতে হবে।

উগ্র-ধর্মান্ধতা, ধর্মীয় উন্মাদনা, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কারণ এবং সালাফি-ওয়াহাবি র‌্যাডিক্যালাইজেশনের সূত্র খুঁজতে গেলে অবশ্যই সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজের ক্রোধ-হতাশা-ক্ষোভ একটি বড় বিষয় হিসেবে বেরিয়ে আসবে। দারিদ্র্য, বৈষম্য, বিচারহীনতা, কর্মসংস্থানহীন উন্নতি ও বেকারত্ব বড় কারণ। সমস্যাগুলোর আর্থ-সামাজিক-নৈতিক সমাধান করতে না পারলে, ইরাক-সিরিয়ায় ‘আইএস’-এর পতন হলেও আমাদের সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের ঝুঁঁকি থেকেই যাবে। এ ঝুঁঁকি মোকাবিলায় পুলিশি ব্যবস্থার সঙ্গে উদারনৈতিক জীবনদর্শন এবং নৈতিকতা ও মানবতাবোধ সৃষ্টির জন্য কার্যকর অনুপ্রেরণা প্রয়োজন। গতানুগতিক ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষায় দুর্বলতা দূর করা প্রয়োজন। ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষায় বিচক্ষণতা প্রয়োজন। সব ক্ষেত্রে ‘ডি-র‌্যাডিক্যালাইজেশনের’ কার্যকর কর্মসূচি প্রণয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

যুগ যুগ ধরে পুঞ্জীভূত অসংখ্য সমস্যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে। কারণ অনেক দিন ধরে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে, দুঃখে, হতাশায় ফুঁসছে। দেশের আর্থ-সামাজিক-নৈতিক পরিস্থিতির যে কোনো গবেষণা, বিশ্লেষণ ও বর্ণনা প্রমাণ করবে যে আমরা সমাজে একটি অসুস্থ মনস্তত্ত্ব তৈরি করেছি। ফলে হৃদয়হীন, ঘৃণা-বিদ্বেষময়, নৃশংস ও ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে দ্রুত ধাবিত হচ্ছি। সমস্যাগুলো নিমজ্জিত হিমশৈল খন্ডের উপরিভাগের মতো (টিপ অব দি আইসবার্গ), যার ১০ ভাগের এক ভাগ মাত্র দেখা যায়। সুবিশাল ‘টাইটানিক’ও এর আঘাতে ডুবে গেছে। পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলো আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে এমনই মারাত্মক ঝুঁঁকি তৈরি করেছে। এখনই রাশ টেনে ধরতে না পারলে অচিরেই একটি ভয়ানক সামাজিক বিস্ফোরণ ঘটে যেতেও পারে। পরিস্থিতি এমনই মারাত্মক হয়ে পড়েছে। ঈশান কোণের বিপদসংকেতটি অতিরঞ্জন মোটেই নয়।

সমাধানের পথে করণীয় অনেক কিছুই আছে। যেমন আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কার, সৎ ও নৈতিক তরুণ-ছাত্র-যুব সমাজ সৃষ্টি। তাদের মধ্যে নৈতিক জাগরণ ও সুস্থ জীবনদর্শনের চর্চা উৎসাহিত করা। সবার মধ্যে আইন মেনে চলার মানসিকতা সমাধানের পথ সুগম করবে। জীবনের সব ক্ষেত্রে- যেমন আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, পেশাজীবী, ব্যবসায়িক ইত্যাদি ক্ষেত্রে শক্তিশালী নৈতিক-নেতৃত্ব সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। বিষয়টি অবশ্যই অতি-আদর্শবাদী। তাই নীতি-আদর্শবান ও শ্রদ্ধাভাজন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গকেই নৈতিক সমাজ বিনির্মাণে একটি হোলিস্টিক ক্যাম্পেইন গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বরেণ্যদের সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রয়োজন। তাহলেই শিকড় থেকে শক্তিশালী নৈতিক জাগরণ, জাতীয় চরিত্র গঠন ও সমাজ রূপান্তর প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এজন্য অবশ্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন, তাই দীর্ঘমেয়াদে চালাতে হবে এ সামাজিক আন্দোলন। এ বিশাল কাজটি করতে হবে নৈতিক সংগঠন গড়ে তুলে, সামষ্টিকভাবে। একটি হোলিস্টিক জাতীয় ক্যাম্পেইনের স্ট্র্যাটেজি, পরিকল্পনা ও বার্ষিক রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সুষ্ঠু চেতনা ও অনুপ্রেরণামূলক কর্মসূচির টার্গেট গ্রুপ হতে হবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত, ধাপে ধাপে ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, পেশাজীবী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও কর্মসূচি চালানো যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়াকেও কাজে লাগাতে হবে। প্রতি মাসে প্রতি সপ্তাহে দেশের শত শত স্থানে শত শত দিনের ক্যাম্পেইন/প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। এজন্য একটি সুসংগঠিত ও সাহসী উদ্যোগ আজ খুবই জরুরি এবং লেগে থাকলে অবশ্যই তা সফল হবে, দীর্ঘ নয়, অল্প সময়েই। তবে ক্যাম্পেইন পরিচালকদের ব্যক্তিজীবনে দৃশ্যমান থাকতে হবে নৈতিক জীবনচর্চার দৃষ্টান্ত। তহবিল ব্যবস্থাপনায় থাকতে হবে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, যাতে জনমনে আস্থা সৃষ্টি হয়। এভাবেই গড়ে উঠতে পারে নৈতিক জাগরণের ও নৈতিক সমাজ গঠনের একটি সফল জাতীয় আন্দোলন।

কাজটি খুব কঠিন মনে হলেও সম্ভব। কারণ সময়টি এখন খুবই উপযুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে হতাশাগ্রস্ত মানুষ শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও সামাজিক উত্তরণের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু গতানুগতিক পথে আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না। সব দলের, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের এবং বিরোধী দলগুলোর সৎ ও সাহসী নেতৃত্ব ও ইতিবাচক ভূমিকা থাকলে, রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে, কাজটি সহজ হবে। সুফলও দ্রুত আসতে পারে। যদি পৃষ্ঠপোষকতা নাও থাকে তবু কাজটি সম্ভব, কারণ সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন উত্তরণ চায়, নৈতিক অবক্ষয়ের অবসান চায়। তারা দেখতে চায় একটি সুসংগঠিত কর্মতৎপরতা।

চূড়ান্ত বিশ্লেষণে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, নৈতিক অধঃপতন ও মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় আমাদের সব সমস্যার প্রধানতম কারণ। অধঃপতন ও অবক্ষয় যতই বাড়ছে সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক জীবনে সমস্যা ততই বাড়ছে। এখন তা চরম ও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এখন সমাজ ও জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে নৈতিক জাগরণ সৃষ্টির এবং ন্যায্য সমাজ গড়ার কোনো বিকল্প নেই। অথচ রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক বা নাগরিক সমাজ- কোনো প্রতিষ্ঠানেই নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ নিয়ে বা উন্নত জাতীয় চরিত্র গঠন নিয়ে বলিষ্ঠ কোনো উদ্যোগ নেই। বর্তমান বাস্তবতায় তা আশাও করা যাচ্ছে না। তাই এ মহৎ উদ্দেশ্য সাধনে একটি অরাজনৈতিক নাগরিক সমাজ সংগঠন ও ক্যাম্পেইন গড়ে তোলা আবশ্যক।

লেখক : সাবেক মেজর জেনারেল ও রাষ্ট্রদূত।

[email protected]

সর্বশেষ খবর