আল্লাহ ও রসুল-প্রেম তথা ইসলামের জন্য সাহাবিদের ত্যাগের কোনো তুলনা নেই। তেমনি তাঁদের স্ত্রীদের অবদানও অনস্বীকার্য। আমরা জানি, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ সাহাবির মধ্যে হজরত জুবায়ের (রা.) অন্যতম। তাঁকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক মহব্বত করতেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, জান্নাতে প্রত্যেক নবীর জন্য দুজন করে সঙ্গী থাকবে। আমার সঙ্গে থাকবে তালহা আর জুবায়ের (রা.)। জুবায়ের (রা.) প্রায় সময়ই বাড়িতে স্ত্রী, পুত্র, সংসার বাদ দিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গেই থাকতেন। তাঁর স্ত্রী আসমা (রা.) কখনো স্বামীকে বাধা দেননি; বরং নিজের অধিকার ত্যাগ করে স্বামীকে ইসলামের পথে জিহাদ করতে সাহায্য করেছেন। কাজের লোক ছাড়াই তিনি ঘরের কাজ করতেন, ঘোড়া ও উটকে খাবার দিতেন।

আসমা (রা.)-এর বাড়িতে অনেক সময় দু-তিন দিনও খাবার থাকত না। ক্ষুধায় সারা দিন ছটফট করতেন। একদিন আসমা (রা.)-এর এক ইহুদি প্রতিবেশী একটি বকরি জবাই করেন। তার রান্না করা মাংসের সুঘ্রাণ আসে তাঁর নাকে। আর বারবার ক্ষুধায় খালি পেটটি মোচড় দিচ্ছিল। তাই তিনি কিছু শলাকাঠি নিয়ে আগুন আনার বাহানায় প্রতিবেশীর বাড়িতে গেলেন। প্রতিবেশীটি কাঠিতে আগুন ধরিয়ে দিলেন; কিন্তু খাবারের কথা কিছুই বললেন না। আগুন নিয়ে এসে আর কী করবেন, ঘরে তো কোনো খাবারই নেই। তাই আগুন ফেলে দিয়ে আবার আগুন আনতে গেলেন। এভাবে তিনবার আগুন নিয়ে এলেন এবং আগুন ফেলে দিলেন। কিন্তু ইহুদির স্ত্রী তাঁকে খাবারের জন্য কিছুই বললেন না। এবার তিনি কেঁদে কেঁদে আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ! আমার এই দুঃখের কথা কাকে বলব। একমাত্র তুমিই আছো, তুমিই আমার খবর জানো। এমন সময় ইহুদি স্বামীটি ঘরে ফিরলে তার স্ত্রী একবাটি বকরির মাংস সামনে এনে দিলেন। তখন স্বামী জিজ্ঞাসা করলেন, আমার ঘরে কি কেউ এসেছিল? স্ত্রী বললেন, হ্যাঁ পাশের বাড়ির মহিলা এসেছিল। স্বামী বললেন, যাও মাংসের বাটিটি সেই মহিলাকে দিয়ে এসো। আসমা যখন নামাজ পড়ে কাঁদছিলেন, তখন দেখলেন ইহুদির স্ত্রী মাংস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এভাবেই সারাটা জীবন কষ্ট ভোগ করেছেন তবু স্বামীকে নিজের অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে কোনো দিন আবদার করেননি। তাই হজরত জুবায়ের (রা.) ইসলামের জন্য, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য, আল্লাহর জন্য জিহাদ করতে পেরে মর্যাদাশীল হয়েছেন। তাই বলে কি বিবি আসমা একাই সাধারণভাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন? না, তিনিও তাঁর স্বামীর সঙ্গে মর্যাদাশীল হয়ে সম্মানসহ জান্নাতে প্রবেশ করবেন। কারণ তিনি দুনিয়ার সামান্য ভোগবিলাস বিসর্জন দিয়ে নিজেকে লাভবান করেছেন আখেরাতের জন্য। মহিলাদের আরও কতভাবে সম্মানিত করেছেন আল্লাহ রব্বুল আলামিন, এর কোনো ইয়ত্তা নেই। যত নবী-রসুল, সাহাবি ও নেক্কার লোক জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তার আগে তাঁদের স্ত্রীরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। স্বামীদের প্রতি তাঁদের সহায়তা এবং তাকওয়ার জন্য আখেরাতের জীবনে তাঁদের যেভাবে পুরস্কৃত করা হবে তা অন্য সবার জন্য ঈর্ষণীয় বলে বিবেচিত হবে।