বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তাহলে কি ‘লাডি’ই বড়?

মনজুরুল আহসান বুলবুল

তাহলে কি ‘লাডি’ই বড়?

অনেকেই হয়তো স্মরণ করতে পারেন, স্বাধীনতা পূর্বকালে সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে মোনায়েম খান নামে একজন গভর্নর ছিলেন। কোন যোগ্যতায় তাকে গভর্নর নিয়োগ করা হয়েছিল তা জানা না গেলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পদযুগল চুম্বনে অন্ধ জি হুজুর যে তার একমাত্র যোগ্যতা সেটিই সবাই বিশ্বাস করেন। তার মেধার একটি প্রমাণ দিই; ষাটের দশকে রবীন্দ্রবিরোধী প্রচারণায় যখন আইয়ুব সরকার আর তাদের অনুসারীরা নানা কান্ড ঘটাচ্ছে তখন এই মোনায়েম খান নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল হাইকে ডেকে বলেছিলেন : কী হাই সাহেব, আপনারা রবীন্দ্রসংগীত লিখতে পারেন না? পাঠক, আশা করি মোনায়েম খানের ‘মেধা’র মাপটি নিজেরাই করতে পারবেন।

এখন যে ঘটনাটি বলব সেটি মোনায়েম খানের নিজের জেলা ময়মনসিংহের। ময়মনসিংহ নিজ ঐতিহ্যেই উজ্জ্বল। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে মোনায়েম সম্পৃক্ততার কারণেই তার নাম উল্লেখ করা। তবে গল্পটি নিছক গল্প নয়, ঘটনা সত্য। রবীন্দ্র বিরোধিতার সেই সময়ে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতি বছরের মতো ‘রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত উৎসবের’ আয়োজন করেছেন। যেহেতু রবীন্দ্রনাথের নাম উৎসবের শীর্ষে, অনুষ্ঠানটি যে শহরে হচ্ছে সেটি মোনায়েম খানের শহর, কাজেই মোনায়েম খান বিষয়টিকে নিলেন তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত দিনে মুসলিম লীগের গুন্ডা দল আর মোনায়েম খানের পান্ডারা লাঠিসোঁটা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে সব আয়োজন পন্ড করে দিয়ে ‘পবিত্র দায়িত্ব’ পালন করল। তো সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একজন অধ্যাপক মাঝপথে শুনলেন ঘটনা, দুর্বৃত্তরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সব তছনছ করে দিয়েছে (সন্ত্রাসীরা তখনো আগ্নেয়াস্ত্রের যুগে প্রবেশ করেনি)। নিম্নভাষী নিরীহ এই বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আর অনুষ্ঠানস্থলে না গিয়ে অবস্থান নিলেন এক চা দোকানে। ছোট শহরের বড় ঘটনা নিয়ে আলোচনা তখন চায়ের টেবিলে। এই আলোচনাতেই ওই অধ্যাপক সাহেব রাগ-ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রেখে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় বলেছিলেন : ‘আমারে এহন কেউ যদি জিগায় রবীন্দ্রনাথ বড় না নজরুল বড়, আমি কইয়াম লাডিই বড়। মোনায়েম খানের গুন্ডারার লাডিই তো রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্তরে হমান কইরা ফালাইছে।’ [প্রমিত : আমাকে এখন কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন, রবীন্দ্রনাথ বড় না নজরুল বড়, আমি বলব লাঠিই বড়; কারণ মোনায়েম খানের গুন্ডাদের লাঠির আঘাতেই তো রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত সমান হয়ে গেছেন]। ময়মনসিংহের প্রবীণ প্রগতিশীল সংস্কৃতি কর্মীদের কাছে এই বিবরণ শুনেছি বহুবার। সব ছাপিয়ে ‘লাডিই যে বড় ‘এ কথাটি মনে রেখেছি বহুদিন। রবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্ত নয়, ভিন্ন এক প্রসঙ্গে এই ‘লাডি (লাঠি)’র কথা আবার জোরেশোরে সামনে আসল। একটি আইন সংসদে পাস হওয়ার এক বছর পর তা কার্যকর করার উদ্যোগ। নির্ধারিত সময়ের পর আরও দুই সপ্তাহ বাড়তি সময়। কিন্তু কার্যকর করা গেল না ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন। আবার তা পড়ল চক্করের মধ্যে।

সবশেষ খবর জানিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠ বলছে (২২.১১,২০১৯) : সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকরে কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহন নেতাদের বৈঠকে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কঠোর অবস্থান থেকে সরকার সরে আসায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে এটা ছাড় নয়, সমঝোতা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় পরিবহন নেতাদের সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১. আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সড়ক আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে না। ২. এই সময়ের মধ্যে চালকদের লাইসেন্স উপযুক্ত শ্রেণি অনুসারে সংশোধন করার সময় দেওয়া হয়েছে। ৩. ফিটনেসসহ বিভিন্ন খাতে গাড়ি মালিকদের বকেয়া মওকুফ করা হবে।

৪. সড়ক দুর্ঘটনার মামলা জামিনযোগ্য করাসহ নয়টি ধারা সংশোধনের ব্যাপারে পরিবহন মালিক-শ্রমিকের দাবি টাস্কফোর্সে পাঠানো হবে। যুক্তিযুক্ত মনে করলে সরকার আইনের এসব ধারা সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয় ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। সংসদে পাসের ১৪ মাস পর আইনটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেয় সরকার। আইনটি যথাযথভাবে কার্যকর করতে কয়েক নেতা ও মন্ত্রীর ‘হুঙ্কার’ও শোনা যায় কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সেই ‘হুঙ্কার’ মিউ মিউ পর্যায়ে নেমে আসে। শেষে সেই মিউ মিউটুকুও একেবারে মিইয়ে যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহন  শ্রমিকদের বৈঠকের পর।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের মনে করিয়ে দেই, ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর যেদিন সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয় সেদিনই সংসদে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটিও পাস হয়। কোনো বিধিমালা ছাড়াই, প্রস্তাবিত কর্তৃপক্ষ গঠন ছাড়াই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি পাসের পর পরই কার্যকর হয়েছে। এই ডিজিটাল আইনটির বিরুদ্ধে আমরা তখনো ছিলাম না, এখনো নই। আমরা শুধু বলেছিলাম এই আইনের অনেক ধারায় অতিমাত্রায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সেগুলো সংশোধন করা দরকার, আর সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্বপালনের বেলায় এই আইনের যাতে অপ-প্রয়োগ না হয় সেজন্য দরকার আইনি একটা নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা। সংসদীয় কমিটিতে আমাদের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত না করেই সে সময়কারমন্ত্রী মহোদয় আইনটি সংসদে নিয়ে যান, সাংবাদিকদের সমালোচনা করেন এবং এই আইনটি নাকি পৃথিবীর বহুদেশ অনুসরণ করার জন্য মুখিয়ে আছে এমন বাগাড়ম্বর করে আইনটি পাস করেন। সেই মন্ত্রীর লেজ ছাঁটা হয়েছে। কাজেই তাকে আর এ বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ নাই। না হলে জিজ্ঞাসা করতাম, এই এক বছরে পৃথিবীর কোন কোন দেশ এই আইনের মডেল অনুসরণ করেছে বা করছে? তবে একটি সুস্পষ্ট তথ্য হচ্ছে; ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সংসদে পাস করায় বিশ্বে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ কয়েকধাপ নিচে নেমে গেছে।

বলা চলে, গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যর্থতার কারণেই আইনটিতে তাদের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটানো যায়নি। আইনটি কার্যকর হয়ে গেছে সঙ্গে সঙ্গেই।

গণমাধ্যম কর্মীরা ব্যর্থ হলেও পরিবহন শ্রমিকরা কিন্তু সফল। সড়ক পরিবহন আইনটি পাস করার ১৪ মাস পরও তারা আইনটি কার্যকর করতে দিলেন না। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাধ্য করলেন বাসায় আলোচনা করতে এবং আইনের সর্বাংশ প্রয়োগ বন্ধ রাখতে।

একটা কথা হামেশাই শুনি : বিলম্বিত বিচার নাকি বিচার না হওয়ারই নামান্তর (জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড)। নতুন আইনের ক্ষেত্রেও কি এমনটা বলা যায় : পবিত্র সংসদে পাস করেও যে আইন কার্যকর করা যায় না সেই আইন মৃত আইনেরই নামান্তর। আইনবিদগণ ভালো বলতে পারবেন। এই যে সংসদে পাস করা একটি আইন ১৪ মাস পরেও কার্যকর করা যাচ্ছে না এ ব্যাপারে মহান সংসদেরই বা প্রতিক্রিয়া কী? তা কি জানার উপায় আছে? অজ্ঞতা থেকেই এমন জিজ্ঞাসা।

সংবাদপত্রের খবরে জানা যাচ্ছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পরিবহন  নেতারা সড়ক পরিবহন আইনের ১২৬টি ধারার মধ্যে নয়টি ধারা নিয়ে আপত্তি তুলে ধরেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে : নতুন আইনে বলা হয়েছে হালকা লাইসেন্স ব্যবহার করে ভারী গাড়ি চালালে শাস্তি পেতে হবে। এটা নিয়ে আপত্তি। মানে হচ্ছে : হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়ে তারা ভারী যানবাহন চালাবেন, তাতে বাধা দেওয়া যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার মামলা জামিনযোগ্য করার দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ গাড়ি চাপা দিয়ে গোটা পরিবারকে পিষে ফেলেও একজন চালক বা তার সহকারী জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাবে; আর পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত থাকবে নিহতদের জানাজা আর কুলখানি নিয়ে! আরেকটি মজার দাবি : মহাসড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বেষ্টনী তৈরি করতে হবে, যাতে তার মধ্যে কোনো পথচারী প্রবেশ না করতে পারে। রাস্তাকে খাঁচার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে; যাতে চোখ বন্ধ করেও গাড়ি চালানো যায়!! কিন্তু তাতেও যে রাস্তা ছেড়ে গাড়ি বাড়িঘর বা দোকানপাটে ঢুকে যাবে না এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। নতুন আইনে যানবাহনের আকারের বিষয়ে যে ধারা রয়েছে সেটা মানলে ৮০ শতাংশ গাড়িই রাস্তায় চালানো যাবে না বলে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের দাবি।

এসব দাবির সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে : যে কোনো লাইসেন্স নিয়ে যে কোনো যান চালাতে দিতে হবে, মহাসড়কে যাতে কোনো পথচারী ভুলেও পা না বাড়ায়; দুর্ঘটনায় পথচারী বা যাত্রীর জীবন নাশ হলেও গাড়িচালকের জামিনের নিশ্চয়তা দিতে হবে, যে কোনো যানবাহন যে কোনো আকারের হতে পারবে, ইঞ্জিনের ওপর গাড়ির আকার হবে ইচ্ছা অনুযায়ী। সূত্রগুলো বলছে : আলোচনার সময় পরিবহন শ্রমিক নেতারা ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজিত হয়ে চাপও সৃষ্টি করে।

একটা আইনের মূল লক্ষ্যই তো শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সেই শৃঙ্খলা যাতে কেউ না ভাঙে সে জন্যই তো শাস্তির বিধান রাখা। সভ্যতার আদিকাল থেকে আমরা আজ সভ্যতার যে জায়গায় এসেছি সে তো নানা সামাজিক রীতি, বিধি ও নানা আইনের কারণেই। শৃঙ্খলা না ভাঙলে তো আর শাস্তির প্রসঙ্গই আসে না। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আইনই করা যাবে না, আইন করে তার প্রয়োগ করা যাবে না, এ কেমন দাবি? একটি রাষ্ট্র কি কোনো সেক্টরে অনাদিকাল ধরে অরাজকতা চলতে দিতে পারে? সড়ক পরিবহন সেক্টরে রাজনীতির এক অসাধারণ সমীকরণ প্রত্যক্ষ করছি। এখানে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, বিএনপি, ২০ দল, জাতীয় পার্টি সব একাকার। কেন? প্রশ্নের জবাব সহজ : প্রাপ্তি যোগ। এত কাঁচা টাকার প্রাপ্তি সম্ভবত ক্যাসিনো বা জুয়ার আসর ছাড়া কোথাও নাই।

মজার ব্যাপার হচ্ছে : পরিবহন সেক্টরের সবচাইতে যে বড় শক্তি সেই শ্রমিকদের চোখে ঠুলি পরিয়ে রেখেছে মালিকরা। এবারও মাঠে নামানো হলো শ্রমিকদের।

কিন্তু পরিবহন মালিকরা কি পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করছেন? পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়া, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য ওভার টাইম দেওয়া, কর্মরত অবস্থায় আহত-নিহত হলে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এগুলো কতজন মালিক তাদের কোম্পানিতে কার্যকর করেছেন? একটা নির্দিষ্ট সময় দায়িত্ব পালনের পর একজন চালক ও তার সহযোগীর পর্যাপ্ত বিশ্রামের বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। কতজন মালিক এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই বলেছেন : সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকার বা চালকের দায়িত্ব নয়, বরং দেশের সব মানুষের দায়িত্ব। নিরাপদ সড়কের জন্য ট্রাফিক আইন মানা, ফুটপাথ দখলমুক্ত; অবৈধ পার্কিং বন্ধ, ফিটনেসহীন যান চলাচল বন্ধ; অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ও যানবাহনের অনিয়ন্ত্রিত গতি বন্ধের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন আইনে এ কথাগুলোই তো বলা হয়েছে। কিন্তু মালিকরা শ্রমিকদের এই বলে ক্ষেপিয়ে মাঠে নামাচ্ছে যে : শ্রমিকরা গাড়ি চালালেই দুর্ঘটনা হবে, দুর্ঘটনা হলেই ফাঁসি হবে। কিছু মালিক ও কিছু পরিবহন শ্রমিক নেতার উসকানিতেই আইন কার্যকরের আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস বন্ধ রাখা শুরু হয়। ৩০টি জেলায় শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট শুরু করে। এর সঙ্গে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ধর্মঘট শুরু হলে দেশজুড়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। বলাচলে, গোটা দেশকে জিম্মি করা হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ‘কত কমিটি, কত সুপারিশ, কিছুই বাস্তবায়ন করা যায় না। করতে গেলেই ধর্মঘটকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন পরিবহন নেতারা।

এবারও তাই হলো। শুধু হলো না, একটি আইনের প্রয়োগ বন্ধ করতে দেশবাসীকে জিম্মি করা হলো, আইন প্রণয়নকারী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি মন্ত্রীকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা হলো। সে জন্যই শুরুর ঘটনাটি বলছিলাম। তা হলে ‘লাডির’ শক্তিই কি সবচাইতে বড়? গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে ‘লাডি’ নাই বলেই তাদের মতামত না নিয়েই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাস হয়; দ্রুত কার্যকরও হয়ে যায়। আর পরিবহন ওয়ালাদের হাতে এই ‘লাডি’ আছে বলেই কি পরিবহন সেক্টরের জন্য করা আইন সংসদে পাস করার ১৪ মাস পরেও কার্যকর করা যায় না? আমরা যে কোনো সমস্যাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে।

কিন্তু ‘লাডি’র শক্তিতে দেশকে অচল করে দিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা যেভাবে সরকারকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করল সেটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ছাড়ই হোক আর সমঝোতাই হোক, পরিবহন শ্রমিকদের (নেপথ্যে মালিকপক্ষেরও) ‘লাডি’ই যে এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে তাই তো দৃশ্যমান। মূলত ‘লাডি’র কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করল সরকার। তবে যারা ‘লাডি’র শক্তি দেখান, যারা এই শক্তিকে উসকানি দেন এবং যারা ‘লাডি’র শক্তির সঙ্গে আপস করেন তাদের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কথা ধার করে বলি : ‘সড়কে বিশৃঙ্খলা হলে আবারও যদি আমাদের সন্তানরা রাস্তায় নামে তাহলে আমাদের কারও পিঠের চামড়া থাকবে না’। আশা করি এই হুঁশিয়ারি সবার হুঁশ ফেরাবে।

                লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর