শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ হালাল রুজির তৌফিক দিন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে আল্লাহ হালাল রুজির তৌফিক দিন

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘খুব শিগগির এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষ জীবন ধারণের জন্য হালাল-হারামের বাছ-বিচার করবে না।’ আল আদাবুল মুফরাদ। কোনো সন্দেহ নেই, নবীজির ভবিষ্যৎবাণী করা সেই সময়টি এখন আমরা পার করছি। টাকার জন্য, জীবনের জন্য আমরা এতটাই পাগল হয়ে ওঠেছি, কী সত্য, কী মিথ্যা, কী হালাল, কী হারাম কিছুই মানছি না। যে যে সেক্টরেই আছি, ওই সেক্টরেই অন্যায়ের সঙ্গে, অবিচারের সঙ্গে, মিথ্যার সঙ্গে আপস করে দেদার টাকা কামিয়ে নিচ্ছি। অবাক করা ব্যাপার হলো, আমাদের ভিতরের নুরানি সত্তাটি যখন বলে ওঠে, এভাবে অন্যায় পথে যে দুপয়সা তুমি কামাচ্ছ এটা কি ঠিক? তখন আমরা নানান যুক্তিতর্ক দিয়ে ভিতরে জেগে ওঠা সতর্কবাণীকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করি।  কখনো বলি, সবাই খাচ্ছে, আমি খেলে দোষ কী। আবার বলি, যা কামাব, তার একটা অংশ মসজিদ মাদ্রাসায় দিলে, বছর শেষে হজ করে এলেই তো মাফ হয়ে যাবে। এমনিভাবে অদ্ভুত ও ধর্মবিরোধী সব যুক্তি বানিয়ে আমরা নিজেরা নিজেদেরই ঠকাচ্ছি। কথায় আছে, পাপ ছাড়ে না বাপকেও। এভাবে আমরা যখন হারামের সাগরে ডুবে থেকে দু-চার পয়সা দান-সদকা করে মাপ পেতে চাই, হজে গিয়ে কাবার গিলাফ ধরে ক্ষমা পেতে চাই, তখন ক্ষমা আমাদের কপালে কতটুকু মিলে ঠিক বলতে পারব না, কিন্তু হারামের শাস্তি আজ আমরা পাই পাই করেই পাচ্ছি, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন, তোমরা যদি সত্যিকারের বিশ্বাসী বান্দা হতে পার, তাহলে শান্তি-সমৃদ্ধি-প্রাচুর্য এবং পৃথিবীর যাবতীয় শক্তি ও কর্তৃত্বের অধিকারী তোমরাই হবে। চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, শান্তি-সমৃদ্ধি-প্রাচুর্য-কর্তৃত্ব এ শব্দগুলো কী আজকের পৃথিবীর মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে? কেউ কেউ হয়তো বলবেন, অমুক তো বেশ সম্পদশালী, দাপটের অধিকারী, সে তো শান্তিতে আছে। একটু ভিতরের খবর নিয়ে দেখুন তো সে কি সত্যিই প্রশান্তিময় জীবনযাপন করছে? দেশে পোশাকি ধার্মিকের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে। জুমার দিন রাস্তা বন্ধ করে মানুষ নামাজ পড়ছে। রমজান মাসে সবার মাঝে ধর্মীয় ভাব জেগে ওঠে। পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ মাহফিলের ছড়াছড়ি। তারপরও এ দেশ কেন আসমানি-জমিনি আজাবের স্বীকার হচ্ছে? কেন এ দেশের মানুষের জীবনে, পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে শান্তি-সমৃদ্ধি নেই? কেন আমাদের অন্তরের অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে? এর একটাই উত্তরÑ বাইরের দিক থেকে আমাদের সব ঠিকঠাক থাকলেও ভিতরে আমরা ছাই হয়ে গেছি। আমরা হালাল-হারাম বিচার না করেই জীবন নামের ঘোড়াটিকে চালাচ্ছি।

হালাল জীবন ধারণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি গল্পের মাধ্যমে রসুল (সা.) বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘একজন মানুষ ধুলোমলিন কাপড় গায়ে এসেছে। দেখেই মনে হচ্ছে সে অনেক দূর থেকে সফর করে এসেছে। মুসাফির দোয়া করা মাত্রই কবুল হয়। সে হাত তুলে বলছে, হে আল্লাহ! আমাকে শান্তি দাও। হে আল্লাহ আমাকে স্বস্তি দাও। একপর্যায়ে সে কান্না শুরু করে দিল। চোখের পানিতে তার দাড়ি ভিজে জামা পর্যন্ত ভিজে গেছে। যে কেউ দেখলেই ভাববে তার দোয়া অবশ্যই কবুল হয়েছে। শোন আমার সাহাবিরা, সে যা খায় তা হারাম, সে যা পড়েছে তাও হারামের টাকায় কেনা। তার উপার্জন পুরোটাই হারাম। তোমরাই বলোÑ এমন মানুষের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কীভাবে কবুল করবেন? কীভাবে আল্লাহ তায়ালা তার জীবনে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি দিবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হালালের সঙ্গে জীবনযাপনের তাওফিক দিন।

লেখক : চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর