রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসুন

অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমেদ

সাম্প্রতিক সময়ে খবরের কাগজে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী অঙ্গীকার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় দারুণ খুশি ও আশান্বিত হয়। তারই সূত্র ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে একটি আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাদের লক্ষ্য জাহাঙ্গীরনগরকে দুর্নীতিমুক্ত করা। আমাদের এ আন্দোলনে বাংলাদেশ প্রতিদিন একটি সংবাদ দিয়ে সহযোগিতা করে। আমরা এ সময় দেখলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন চাঁদাবাজির। প্রধানমন্ত্রী কালবিলম্ব না করে শোভন-রাব্বানীকে বিদায় করে দিলেন। এরপর শুরু হলো যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান। বাংলাদেশের মানুষ খুব খুশি হলো প্রধানমন্ত্রীর এই অভিযান দেখে। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্ররা অনুপ্রাণিত হলেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনা নিয়ে দুর্নীতির সম্পর্ক জাতির সামনে নিয়ে এলো। এর মাঝে অভিযোগ এলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে। সবাই আশা করছিলেন শুদ্ধি অভিযান এখানেও হবে। জনগণ দেখল সরকার বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অব্যাহতি দিল। জনগণ আরও আশান্বিত হলো। কিন্তু বাদ সাধলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ভাবখানা এমন যে, ওনাকে দুর্নীতির দায় থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। কারণ তিনি একজন প্রথম নারী উপাচার্য এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু নাছোড় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এখন তারও বিচার চায়। আর এখানেই বিপত্তি। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও অনেক। তার সমাধান জাহাঙ্গীরনগর চিন্তা করেছিল নির্বাচনের মাধ্যমে দিতে। কিন্তু সেই সুযোগ জাহাঙ্গীরনগর হারায় যখন সরকার তাকে দ্বিতীয়বার বিনা নির্বাচনে নিয়োগ দেয়। আর তখনই তারা আন্দোলনে নামে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করতে। কিন্তু নানা কারণে তা সফল হয়নি। নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে উপাচার্যকে একটি মহল ক্ষমতায় রেখে অনেক স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেসব কৌশল ব্যর্থ হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স যদি নীতি হয় তাহলে উপাচার্যকেও সরে যেতে হয়। কারণ যে আলোচনাকে কেন্দ্র করে শোভন-রাব্বানীর বিদায় সে আলোচনায় উপাচার্য একটি পক্ষ। ছাত্রলীগ নেতার দাবি, উপাচার্য তাদের টাকা দিয়েছেন পরিবারের মাধ্যমে। আর উপাচার্য নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনেছেন বিষয়টিকে লুকাতে গিয়ে। তিনি একবার বলেছেন আলোচনা হয়েছে রাজনৈতিক বিষয়ে, এরপর বলেছেন টাকা ভাগের আলোচনা করতে এসেছিলেন তারা। কেন উপাচার্য প্রথমে সত্য লুকালেন? এখানে একটি অনুমান কাজ করেছে। সেটা ভ্রান্ত হতে পারে। উপাচার্য জাকসু নির্বাচন সামনে রেখে এ কাজটি করে ওপর মহলের আস্থাভাজন হতে চেষ্টা করেছেন। আর সেজন্য বিরোধী পক্ষ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। আমার এ অনুমান ভুল হলে ভালো হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে আরও অনেক অভিযোগ ছিল সেগুলো এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছে। উপাচার্য সবকিছু সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর জেগেছে প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়। সুতরাং এটাকে কোনো প্রকার রং না দিয়ে বরং সোজা পথে চলা আমার মতে ভালো। উপাচার্য ছাত্র-কর্মচারী ব্যবহার করেছেন এবং ছাত্র-শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলেছেন সেসব ছাত্র-কর্মচারী। এবং এই সন্ত্রাসী কর্মকা- পুলিশের সামনে ঘটেছে। উপরন্তু, উপাচার্য এটিকে গণঅভ্যুত্থান অভিহিত করেছেন। রাঙ্গা যেমন আমাদের অনুভূতিকে আঘাত করেছেন, তেমনি তিনি সবাইকে অপমানিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যদি উপাচার্যকে সরিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে টেনে নেন তাহলে তিনি যে মহান অভিযাত্রা শুরু করেছেন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তা সফল হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আন্দোলন কারীদের মাঝে যারা আছেন তাদের কারও কোনো অভিসন্ধি নেই। আজ আপনি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছেন, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ, বই দিয়েছেন। বৃত্তি দিচ্ছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সফল হয়েছেন, শিশুদের স্কুলে খাবার দেবেন, পদ্মা সেতু এখন নিজের টাকায় বাংলাদেশ করছে সেই মহান গৌরব আপনাকে যেমন মহিমান্বিত করে, তেমন আমাদের দেশপ্রেমে অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা আন্দোলন করি আপনাকে সহযোগিতা করতে। আন্দোলনকারীরা একটি ঢিল মারেননি বা কাচ ভাঙেননি। আমাদের আন্দোলন আপনার অনুপ্রেরণায়। আমরা আপনার এজেন্ডা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে কর্মী। বাংলাদেশ আজ যে উন্নয়নের মহাসড়কে তার গৌরবময় অংশীদার হতে চাই আমরা। বঙ্গবন্ধুই আমাদের আদর্শপুরুষ। জয় বাংলাই আমাদের সেøাগান। আমরা আপনার স্বপ্ন ঘরে ঘরে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেওয়ার অভিযাত্রায় সহযাত্রী হতে চাই। আমাদের আপনার সঙ্গে নেবেন কি? পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে বলে যারা সমালোচনা করেছিলেন তারা আমাদের দুটি উপকার করেছেন। প্রথমত বিশ্বব্যাংকের গোলামি থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আর দ্বিতীয়টি হলো বাঙালি যে সাহসী জাতি তা আপনি প্রমাণ করেছেন। আজ আপনার নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হচ্ছে। তেমনিভাবে জাহাঙ্গীরনগর আপনাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও শক্তভাবে দাঁড়াতে শক্তি জোগাচ্ছে। যাতে উন্নয়ন ঘুণ বা উইপোকায় না খেতে পারে। আমরা কোনো ভাগের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের জীবনবৃত্তান্ত আপনি যে কোনো এজেন্সির মাধ্যমে পরীক্ষা করতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনি আমাদের মাঝে আসুন, সত্য কী জেনে যাবেন।

আপনি ১১ বছরেও জাহাঙ্গীরনগর এলেন না! অথচ পাশ দিয়ে কতবার গেছেন। যখন বিরোধী দলে ছিলেন সেই জাহাঙ্গীরনগরকে আপনি সুযোগ পেলে দেখতেন। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনাকে স্বাগত।

লেখক : দর্শন বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর