রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর ভয়াবহ পরিণাম

যুবায়ের আহমাদ

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর ভয়াবহ পরিণাম

ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে মহান ইবাদত হিসেবে অভিহিত করেছে। এমনকি সৎ ব্যবসায়ীদের হাশরের ময়দানে নবীদের সঙ্গী হওয়ার মতো মহাপুরস্কারের ঘোষণাও করেছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, দুনিয়ায় সামান্য ‘বেশি’ লাভ করার আশায় ব্যবসায়ীরা পরকালের সেই মহাপুরস্কার নষ্ট করছেন। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অপেক্ষায় থাকেন, কীভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণকে কষ্ট দিয়ে নিজেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে পারবেন। অকারণে বাড়িয়ে দেন চালের দাম। গুজব ছড়িয়ে বাড়িয়ে দেন লবণের দাম আর সামান্য অজুহাত পেলেই বাড়াতে থাকেন পিয়াজের দাম। নিত্যপণ্যে বাজারে আগুন দেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। বাহ্যিকভাবে তাদের দেওয়া আগুনে নিরীহ মানুষ পুড়লেও সে আগুনে ওইসব ব্যবসায়ী নিজেদেরই পোড়েন। আল্লাহতায়ালা এসব মজুদদারের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ছিন্ন করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল, আল্লাহও নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন তার থেকে।’ মুসনাদে আহমাদ। দুনিয়ার সামান্য ‘লাভ’ করতে যদি কেউ আল্লাহর সঙ্গে নিঃসম্পর্ক হয়ে পড়ে তার চেয়ে হতভাগা আর কে?

মজুদদার হয়তো ভাবছেন, তিনি বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বেশি লাভ করে কোটিপতি হবেন। কিন্তু লাভ কী? আখেরাতের পাশাপাশি তিনি তার দুনিয়াকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। কারণ, মজুদদারির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার ওপর গজব ও দারিদ্র্য অবধারিত হবে। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম উপায়ে সংকট তৈরি করে আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেবেন।’ ইবনে মাজা। পক্ষান্তরে যারা মজুদদারি না করে স্বাভাবিকভাবে মুনাফা অর্জন করতে চান আল্লাহ তাদের ব্যবসায় বরকতের দরজা খুলে দেন। তার লাভ অল্প হলেও তা হালাল। তাতে থাকবে আল্লাহ-প্রদত্ত বরকত ও সমৃদ্ধি। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অবাধ ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুদদকারী অভিশপ্ত হয়।’ ইবনে মাজাহ। মজুদদারি করে হারাম পথে বেশি উপার্জন করে লাভ কী? একজন মানুষ হারাম উপার্জন করলেই বেশি ভোগ করতে পারবে না; যতটুকু আল্লাহ তার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন ততটুকুই সে লাভ করবে। এভাবে মজুদদারির মাধ্যমে কোটি মানুষকে কৌশলে জিম্মি করে উপার্জিত হারাম টাকার দান-সদকা কোনো কাজে আসবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ সঞ্চয় করে এরপর তা দান করবে, সে এই দানের কোনো প্রতিদান পাবে না, বরং তাকে পাপ ভোগ করতে হবে।’ ইবনে হিব্বান। এমনকি কোনো মজুদদার যদি তার সমুদয় সম্পত্তিও দান করে দেন তবু তার গুনাহ মাফ হবে না। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর জন্য) ৪০ দিন পর্যন্ত কোনো জিনিস গুদামজাত করে রাখবে, তার এত মারাত্মক গুনাহ হবে যে, এই সমুদয় সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ মিশকাত। একজন ব্যবসায়ী যদি মজুদদারির মতো হারামের পথ ছেড়ে হালাল পথে ব্যবসা করেন তাহলে একদিকে যেমন আল্লাহ তার জন্য সমৃদ্ধির দরজা খুলে দেবেন, অন্যদিকে হালাল ব্যবসার পুরস্কার হিসেবে হাশরের ময়দানে নবী ও শহীদদের সঙ্গী হয়ে ধন্য হবেন।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর