সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধা তালিকা

চার যুগেও সম্পন্ন না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক

স্বাধীনতার পর চার যুগ কেটে গেলেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন দেশের প্রতি দায়বোধ তাদের জীবনবাজি রাখার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ব্যক্তিগত কিছু অর্জনের জন্য তারা অস্ত্র হাতে তুলে নেননি, নিজের এবং স্বজনদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলেননি। যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পরও অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নিজেদের নাম ওঠানোর গরজ অনুভব করেননি। মুক্তিযোদ্ধাদের এক বড় অংশ নিরক্ষর হওয়ায় তারা তালিকায় নাম উঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়েছেন। তবে মতলববাজরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় স্থান পেয়েছে এমন সংখ্যা ভূরিভূরি। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে সঠিকভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হয়েছে। এখনো অনেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, তারা সনদও পাচ্ছেন। এসব সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মকানুন। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করার বদলে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে যে-যার প্রয়োজনে ও সুবিধা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার গেজেট করাচ্ছেন। বর্তমানে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৩৫ হাজার। এর মধ্যে সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে ভাতা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা। বাকি ৫০ হাজারের ভাতা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কেন তাদের ভাতা বন্ধ তা পরিষ্কার করেনি সরকার। তাদের সনদও বাতিল করা হচ্ছে না। তবে তাদের অনেকের সন্তানরা এই সনদ দেখিয়ে সরকারি চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। বোদ্ধাজনদের মতো যাদের ভাতা বন্ধ হয়েছে তাদের সবাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। ভুল তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তারা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২৫৭ জনের সনদ বাতিল করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি অবৈধ পন্থায় যারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ঢুকিয়েছেন এবং সুবিধা নিয়েছেন তাদের কারোরই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়নি। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা স্বাধীনতার চার যুগ পরও সম্পন্ন না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এ দুর্ভাগ্যের আশু অবসান কাম্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর