বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বুড়িগঙ্গার পানিদূষণ

বন্ধ হোক সুয়ারেজ লাইন

সুয়ারেজ লাইনের মানববর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পতিত হওয়ার কারণে যে রাজধানীর এই প্রধান নদী ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ছে তা একটি ওপেন সিক্রেট। তবে এ মহাসত্যটি ঢাকা মহানগরীর প্রায় সব বাসিন্দার জানা থাকলেও ওয়াসা নামের সাদা হাতির জানা ছিল না। তারা এ বিষয়ে কুম্ভকর্ণের ঘুমেই সময় কাটিয়েছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে নির্দ্বিধায় তারা মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়। গত ১৮ জুন ওয়াসার প্রতিবেদনে বলা হয়, বুড়িগঙ্গায় ওয়াসার কোনো সুয়ারেজ লাইন নেই। কিন্তু এরপর পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন এলাকায় ৬৮টি স্থান দিয়ে দূষিত বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা হচ্ছে; যার ৫০টি ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন। এ দুই প্রতিবেদন দেখার পর ১৭ নভেম্বর ওয়াসার এমডিকে শোকজ করে হাই কোর্ট। আদালতের আদেশ অমান্য করা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- সে বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়। এ অবস্থায় ওয়াসার এমডির জবাব গত সোমবার হাই কোর্টে দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, বুড়িগঙ্গায় ৬৭টি স্থান দিয়ে বর্জ্য পড়ছে। তার মধ্যে ওয়াসার লাইন ১৬টি। তাতে ২০১১ সালে হাই কোর্টের দেওয়া রায় যথাযথ বাস্তবায়ন না করায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া হয়। ওয়াসার এ দুই ধরনের প্রতিবেদনে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাই কোর্ট। স্মর্তব্য, মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির করা এক রিট মামলায় হাই কোর্ট ২০১১ সালে এক রায়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া নদীর পানি যাতে দূষিত না হয় সেজন্য সব ধরনের বর্জ্য ফেলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আট বছরেও উচ্চ আদালতের নির্দেশ যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ নেয়নি ওয়াসা। বিষয়টিতে এইচআরপিবির পক্ষ থেকে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ বিষয়ে শুনানির আয়োজন করা হয়। গত সোমবার আদালতে ওয়াসার পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয় বুড়িগঙ্গায় ৬৭টি প্রধান আউটলেট বা সুয়ারেজ লাইন পতিত হয়েছে; যার মধ্যে ওয়াসার মাত্র ১৬টি। আদালত ওয়াসার প্রতিবেদন গ্রহণ না করে ক্ষোভ প্রকাশ করে। বলে, ভূমি বা রাস্তার উপরিভাগের ড্রেন বাদে বুড়িগঙ্গায় যে  সুয়ারেজ লাইন বা ড্রেনেজ পড়েছে তা বন্ধ করার দায়িত্ব ওয়াসার। বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত রাখার স্বার্থে ওয়াসার উচিত সেগুলো বন্ধ করা। আমরা আশা করব, এ নির্দেশনা ওয়াসাকে কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে উঠতে সহায়তা করবে। নগরবাসীর কামনাও তাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর