মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সড়কে নৈরাজ্য : নতুন আইনের বাস্তবায়ন কি আদৌ হবে?

রোবায়েত ফেরদৌস

সড়কে নৈরাজ্য : নতুন আইনের বাস্তবায়ন কি আদৌ হবে?

বিচারহীনতার এই বাংলাদেশে অবশেষে বিচার মিলল। ঘটনার ১৬ মাসের মাথায় দিয়া ও রাজীবের হত্যার বিচার পাওয়া গেল। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত হন শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম, বয়স ১৬ ও আবদুল করিম রাজীব, বয়স ১৭।  সড়কে তাদের হত্যার জন্য আদালত জাবালে নূর বাস কোম্পানির দুই চালক ও একজন হেলপারকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে। এ রায়ে কিছুটা স্বস্তি এলেও আরও অসংখ্য দুর্ঘটনার বিচার কিন্তু হয়নি। প্রতিদিন গড়ে ১২-১৫ জন মানুষ সড়কে মারা যাচ্ছে। নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের মাধ্যমে শুরু হওয়া নিরাপদ সড়কের দাবির বিক্ষোভ পরবর্তীতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মতে, ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৭ হাজার ৩৯৭ এবং ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে রেলপথের ৩৭০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৯৪ জন, নৌপথের ১৫৯টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১২৬ এবং আকাশপথে ৫টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ জন। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৪৩৯ জন। ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬৪৫ জন। দুই প্রতিষ্ঠানের চিত্রে তুলনামূলকভাবে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে এলেও সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে যাওয়া প্রাণ কিন্তু থামছে না। এসব ঘটনায় কালেভদ্রে কোনো কোনো জন ন্যায়বিচার পেলেও বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর পরিবার ন্যায়বিচার পায় না। ফলে অপরাধীরা সব সময় পার পেয়ে যাচ্ছে এবং আরও এমন দুর্ঘটনা ঘটাতে সাহস পায় বলে আমরা মনে করি। অদ্ভুত দেশে বাস করি আমরা যেখানে চালক অবৈধ, যানবাহন অবৈধ, রুট অবৈধ। বৈধ জিনিসের সংখ্যা খুব কম। বৈধ টার্মিনাল নেই, বৈধ পার্কিং নেই, যানবাহনের সংখ্যার সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় চালকও নেই। যারা চালাচ্ছেন তাদের অনেকেরই বৈধ লাইসেন্স নেই। সড়কে সুশাসন নেই; নেই কোনো জবাবদিহির কাঠামো। আইন প্রয়োগ বা কার্যকরের প্রশ্ন এলেই দেখি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট। চলে অঘোষিত ধর্মঘট। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে বিভিন্ন সময়ে ট্রাফিক পুলিশ, সিটি করপোরেশন বা বিআরটিএ নানা উদ্যোগ নিয়েছিল এবং এর একটিও কার্যকর করতে পারেনি। ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএ অভিযান চালিয়েছে, পুলিশ বলেছিল বাসের দরজা বন্ধ থাকতে হবে, লেগুনা চলতে দেওয়া হবে না। কিছু রাস্তায় রিকশা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এবার সড়ক আইন কার্যকরের শুরুতে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল কাভার্ড ভ্যানের মালিক-শ্রমিকদের তরফে। এ বাহনগুলো পুরো অবৈধ। বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন ছাড়া এগুলোর কোনো বৈধতা নেই। কারণ মূল বাহনটিকে অবৈধভাবে পরিবর্তন করে এগুলো বানানো হয়েছে। এই অবৈধ বাহনগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে দীর্ঘদিন বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দেশে এ ধরনের কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা এখন প্রায় ২২ হাজারে এসে ঠেকেছে। এর সঙ্গে এখন আমদানি-রপ্তানি জড়িয়ে গেছে। অনেক অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে এ খাতে। এজন্য তো বিআরটিএকে ধরা উচিত। দায় তো তাদের। ঢাকা শহরের যথাযথ পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে যা যা দরকার, অনেক কিছুই নেই। শহরে বাস টার্মিনাল থাকার কথা তা নেই, লে ওভার টার্মিনাল থাকার কথা, তা নেই। শহরে ট্রাক প্রবেশ করে, কিন্তু কোনো ট্রাক টার্মিনাল নেই। রাজউক এগুলো রাখেনি। নতুন শহর পূর্বাচল হচ্ছে সেখানেও নেই। সিটি বাস শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পার্ক করা থাকে, আটক করতে গেলে চালক বা মালিক জিজ্ঞাসা করবে, বাস রাখব কোথায়। কোনো উত্তর কিন্তু নেই।

সম্প্রতি যে আইনটি পাস হলো তা কিন্তু যুগোপযোগী। আইনের কোথাও কোনো সমস্যা নেই। গত বছরের আগস্টে জাতীয় সংসদে আইনটি পাস হয়েছিল। এর পেছনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একটি পটভূমি ছিল। রাষ্ট্রপতি আইনটি অনুমোদন করলেন অক্টোবরে। এর পরই যদি আইনটি সরকার বাস্তবায়ন করত, পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না। জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সমন্বয়ে আইনের বিধিমালা প্রণয়নে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হলো। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই বিধিমালাও আলোর মুখ দেখেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাস-ট্রাকের চালকরা বর্তমান লাইসেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। এরপর তারা বিআরটিএ থেকে নতুন লাইসেন্স নেবেন। দ্বিতীয়ত, জরিমানার বিষয়টি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। সরকার যখন আইনটি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিল, তখন স্বরাষ্ট্র এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বললেন, আইনের বিষয়ে তারা কাউকে ছাড় দেবেন না। পরে যখন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ধর্মঘটে গেলেন, বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলা বন্ধ হয়ে গেল, তখন তাদের সুর নরম হলো। এভাবে চাপের মুখে সরকার পিছু হটলে কোনো আইনই বাস্তবায়ন হবে না। জাতীয় সংসদের কোনো আইন তো বাইরে থেকে ঘোষণা দিয়ে পরিবর্তন করা যায় না। এটি পরিবর্তন করতে হলে ফের সংসদের মাধ্যমেই করতে হবে। সরকারের উচিত ছিল আইনটি পাসের পরপরই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান খুঁজে বের করা যেত। লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চালানোর দায়ে পুলিশ জরিমানা করবে না। জরিমানা করবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আর জরিমানার অর্থ তারা যেভাবে বলেছেন, পুলিশ বা সরকারি কোষাগারে যাবে না। এটি যাবে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য যে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের কথা, সেই ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে। সড়কে যে সীমাহীন নৈরাজ্য চলছে, সেই সংকট উত্তরণের উপায় হলো আইনটির যথাযথ বাস্তবায়ন। টাস্কফোর্স যে ১১১টি সুপারিশ করেছে, তাতে বাস্তবায়নের পথনির্দেশ রয়েছে। পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কেউ আইন ভঙ্গ না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শঙ্কা অমূলক। যারা অন্যায় করবেন, তাদেরই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পরিবহন মালিক হোক বা শ্রমিক কারও চাপের মুখে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইনের বাস্তবায়ন আটকে রাখা যাবে না। মানুষকে জিম্মি করে, সরকারকে বিব্রত করে যদি কেউ এ আইনের বাস্তবায়ন ঠেকানোর চেষ্টা করেন, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু সড়কব্যবস্থার মধ্যে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। দেশে ভারী যানবাহনের সংখ্যার তুলনায় চালক নেই। বিআরটিএ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে কিন্তু চালক আছে কিনা, সেদিকে তার নজর নেই। দুটো দেখার দায়িত্বই তাদের। সড়ক আইন কার্যকরের পাশাপাশি বিআরটিএকে ধরা উচিত চালকের সংখ্যা বিবেচনায় না নিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার জন্য। হালকা বাহনের লাইসেন্স নিয়ে চালকদের ভারী গাড়ি চালাতে হচ্ছে। ফলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। লাইসেন্স হালনাগাদ করার জন্য এখন আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হচ্ছে। বিআরটিএর কাছে যানবাহনের সংখ্যার যেমন হিসাব আছে, তেমন চালকের সংখ্যাও জানা। এর মধ্যে সমন্বয়ের কোনো উদ্যোগ তারা নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাস-ট্রাকে বাহনপ্রতি দুজন চালক থাকতে হবে। তা কার্যকরে উদ্যোগ কই! এ দেশে চালকরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালান। দুর্ঘটনার মামলার তদন্ত অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে করা উচিত। এখানে পুলিশ বা মালিক-শ্রমিক কোনো পক্ষের যুক্ততাই যথাযথ নয়। একজন চালক হয়তো নিয়ম মেনে তার বাস বা ট্রাক চালাচ্ছেন, সামনে হুট করে একটি নসিমনের মতো বাহন এসে পড়ল বা একজন পথচারী নিয়ম না মেনে রাস্তায় এসে পড়ল এবং একটি দুর্ঘটনা ঘটল। এর দায় কোনোভাবেই চালকের নয়। কিন্তু সাধারণভাবে দায়টি চালকের ওপর এসে পড়ে এবং চালক অন্যায়ের শিকার হন। বিআরটিএর বর্তমান লোকবল ও তাদের যে দক্ষতা তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বিআরটিএর বড় প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি রয়েছে। এর লোকবল ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। একটি গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দিতে হলে সেই গাড়ির ৪০ থেকে ৬০টি জিনিস দেখতে হয়। বিআরটিএ কি তা আদৌ দেখতে পারে? ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে এমন অনেক গাড়ির মাইলো মিটার ঠিক নেই। সারা দেশে মাত্র ১০০ জন ইন্সপেক্টর আছেন। এই লোকবল দিয়ে এত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা কীভাবে সম্ভব? আন্তর্জাতিক নিয়ম হচ্ছে একজন চালককে লাইসেন্স দেওয়ার আগে অন্তত ৩৫ মিনিট টানা গাড়ি চালিয়ে সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয়। অথচ আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে ছোট জায়গায় পরীক্ষা নেওয়া হয়, তা চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক। এই প্রতিষ্ঠানের লোকবল বৃদ্ধি ও দক্ষতা-যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা দেখছি সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতার পথ ধরছে। আর সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তো আইনের ঊর্ধ্বে। তারা উল্টো পথে গাড়ি চালালেও কিছু হয় না। ট্রেড ইউনিয়নের বাইরে যারা আছেন, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ, তাদের ওপর আইন প্রয়োগের চেষ্টা হবে। প্রাইভেট গাড়ির মালিক-চালক বা পথচারীর ওপর প্রয়োগের চেষ্টা হবে। কিন্তু সেটাও টেকসই হবে না। রাস্তার ফুটপাথ ঠিক না থাকলে বা জেব্রা ক্রসিং না থাকলে লোকজন বিশৃঙ্খলভাবে চলাচল ও রাস্তা পার হবেই। আমরা চাইব, বাসগুলোর ফিটনেস, চালকদের লাইসেন্স ঠিক করা হোক। বিআরটিসির বাস লিজে দেওয়ার সুযোগ নেই। তা বন্ধ করা হোক। সরকারি গাড়িগুলোকে নিয়ম-কানুনের মধ্যে আনা হোক। অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা সব সরকারি অফিসের সামনে পার্ক করা কর্মকর্তাদের গাড়ির বিরুদ্ধে নেওয়া হোক। কোনো আমলা বা ভিআইপি যাতে উল্টো পথে চলতে না পারেন তা নিশ্চিত করা হোক। নতুন আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে যা করা উচিত তা হলো, সিটি বাস টার্মিনাল ও ট্রাক টার্মিনাল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া, বাস রুটে শৃঙ্খলা এনে ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে তা পরিচালনা করা, সিগন্যাল ব্যবস্থা ঠিক করার উদ্যোগ নেওয়া ও ফুটপাথগুলোকে চলার উপযোগী করা। যে কোনো দেশেই পরিবহনব্যবস্থা একটি জটিল বিষয় এবং অব্যাহতভাবে এ খাতে কাজ করে যেতে হয়। কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। বড় বড় প্রজেক্ট নয়, এ খাতে ছোট ছোট সংস্কার দরকার। একে জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান অনেকটাই করা গেছে কারণ, বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহনব্যবস্থা ও খাতকেও এখন সেভাবেই দেখতে হবে। সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর কাঁধে সাংগঠনিক গুরুদায়িত্ব রয়েছে। এত বড় একটি দলের দায়িত্ব সামলে এই মন্ত্রণালয় চালানো কঠিন কাজ। এ মন্ত্রণালয় পুরো অখ- মনোযোগ দাবি করে। এ অবস্থায় এই মন্ত্রণালয়ে একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার কথা সরকার বিবেচনা করে দেখতে পারে। কারও চাপের মুখে নতিস্বীকার করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী নিজে আইনটি বাস্তবায়নের পক্ষে সংসদে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। সড়ক নিরাপদ হলে যাত্রী ও পথচারীদের মতো পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। কথিত শ্রমিক নেতারা সাধারণ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছেন। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্যই এ আইন করা হয়েছে। এ আইনের উদ্দেশ্য কাউকে শাস্তি দেওয়া নয়। যদি সবাই এ আইন সঠিকভাবে মেনে চলেন, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আর যদি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরেই আসে, তাহলে আইনে জরিমানার ভয় কীসের?

নিজেদের সংশোধন না করে, সঠিক লাইসেন্স না নিয়ে, দক্ষতা অর্জন না করে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস না নিয়ে উল্টো জেল-জরিমানার কথা বলে জনগণকে জিম্মি করে কেন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হলো এটা একটা বড় প্রশ্ন। ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সরকার বাস্তবায়নের সময় দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দিল। এরপর যেদিন বাস্তবায়নের ঘোষণা এলো, সেদিন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘটে গেলেন। সড়কে নৈরাজ্য চলছে, প্রতিদিন মানুষ খুন হচ্ছে আর সরকার কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কাছে নতিস্বীকার করে আইন প্রয়োগে চরম শিথিলতা দেখাচ্ছে। চালক আর মালিকরা কি রাস্তায় মানুষ খুনের লাইসেন্স চান? এভাবে চললে কিয়ামততক কি সড়কে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে? তার চেয়েও বড় কথা- এভাবে কি কোনো সভ্য রাষ্ট্র চলতে পারে?

 লেখক : অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

সর্বশেষ খবর