বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শান্তি প্রতিষ্ঠায় ন্যায়-বিচারের বিকল্প নেই

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

শান্তি প্রতিষ্ঠায় ন্যায়-বিচারের বিকল্প নেই

পারিবারিক, সামাজিক রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহর একটি পরিচয় তিনি ন্যায়বিচারক। মানবজাতিকে তিনি তাদের সামগ্রিক জীবনে আদল বা ন্যায় প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। এজন্য আল্লাহ তাঁকে এমন এক ভূখন্ডে  পাঠান যেখানে ন্যায় বা ইনসাফ লোপ পেয়েছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের আগে গোটা আরব জাহানে ন্যায়বিচার বলতে কিছুই ছিল না। জোর যার মুল্লুক তার এটাই ছিল তখনকার সামাজিক রীতি। নিরীহ নির্যাতিত মানুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠত। মানুষ হিসেবে সবাই সমান। সাম্য ও সম্প্রীতির এ মূলমন্ত্র সমাজ থেকে তিরোহিত হয়ে গিয়েছিল। এমনই এক কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ ন্যায়বিচারের মূর্ত প্রতীক ও রহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবে তাঁর প্রিয় হাবিব রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরবের বুকে প্রেরণ করেন। আল্লাহ তাঁকে ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংবিধান মহাগ্রন্থ আল কোরআন প্রদান করেন। আল কোরআনে আল্লাহর ঘোষণা, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ইনসাফ ও সদাচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কর। এটি তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী।’ অর্থাৎ ন্যায় ও ইনসাফ না করলে তাকওয়া অর্জিত হয় না। আল্লাহর প্রতি বান্দার নিরঙ্কুশ আনুগত্য নিশ্চিত করার স্বার্থে ন্যায়বিচারের প্রতি আন্তরিক হতে হবে।

ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে তাকওয়ার অন্যতম ভিত্তি; যার মধ্যে ইনসাফ নেই তার মধ্যে তাকওয়াও নেই। স্বজনপ্রীতি, জুলুম-অত্যাচার, হিংসা-প্রতিহিংসা এসব বিষয় তাকওয়ার অন্তরায়। স্বজনপ্রীতি জাহেলি যুগের এক ধরনের বর্বরতা। ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আপসহীন। তিনি স্বজনপ্রীতির মূলে কুঠারাঘাত করে ইনসাফের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি আমার প্রিয় কন্যা ফাতিমাও চুরি করে তাহলে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দেব।’ বুখারি, মুসলিম। ন্যায়বিচারকদের আখিরাতে পুরস্কৃত করা হবে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয় যারা ন্যায়বিচারক তারা পরকালে আল্লাহর দরবারে তাঁর ডান পাশে নুরের মিম্বারে সমাসীন হবে।’  জীবনের সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শান্তি আনয়ন মুমিনদের দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তৌফিক দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর