বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাঠগড়ায় মিয়ানমার

রোহিঙ্গারা ফিরে পাক অধিকার

রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে অবশেষে মিয়ানমারকে নেদারল্যান্ডসের হেগের পিস প্যালেসে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে দাঁড়াতে হলো। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলার ভিত্তিতে গতকাল গাম্বিয়া আদালতে তাদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরেছে। এতকাল চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি বন্ধু দেশের আনুকূল্য থাকায় মিয়ানমার ধরাকে সরা জ্ঞান করে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টি নানা অপকৌশল প্রয়োগ করে এড়িয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরিবেশ সৃষ্টির বদলে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশকে দায়ী করার চেষ্টা চালিয়েছে। বলতে চেয়েছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাচ্ছে না। কিন্তু গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার পর মিয়ানমারের নাকে পানি ঢুকেছে। মামলায় লড়তে সু চির নেতৃত্বে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এখন হেগে অবস্থান করছে। অন্যদিকে মামলার বাদী গাম্বিয়াকে কারিগরি সহায়তা দিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলও এখন হেগে। বাংলাদেশ ছাড়াও সহায়তা করছে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলাটি দায়ের করে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রাখাইনে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে ওই মামলায়। আদালতের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার গাম্বিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। আজ বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার। এরপর ১২ ডিসেম্বর সকালে গাম্বিয়া পাল্টা যুক্তি দেবে মিয়ানমারের বিপক্ষে। আর দুপুরে মিয়ানমার গাম্বিয়ার জবাব দেবে। আন্তর্জাতিক আদালতে তিন দিনের শুনানিতে জাতিসংঘ নিযুক্ত ১৬ জন বিচারক প্যানেল মূলত উভয় পক্ষের আইনজীবীদের প্রশ্ন করবেন। এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ল ফার্ম ফলি হককে আইনজীবী নিযুক্ত করেছে গাম্বিয়া। এ ফার্মটি মিয়ানমার ও ভারতের বিপক্ষে সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করেছে।

মিয়ানমার বিশ্বব্যাপী পরিচিত তুখোড় আইনজীবী স্যার উইলিয়াম এ শাহবাসকে নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশ এ মামলায় কোনো পক্ষ নয়। মিয়ানমারের সঙ্গে বরং দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। কিন্তু মিয়ানমারের নোংরা আচরণে কোনো পক্ষ না হলেও নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশ গাম্বিয়াকে তথ্য-উপাত্ত সহায়তা করছে। আশা করা যায়, আদালত ন্যায্যতার পক্ষে রায় দেবে। রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে যা আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর