শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

ঘাতকদের শাস্তি নিশ্চিত হোক

মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিনম্র শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞ জাতি তার শহীদ সন্তানদের স্মরণ করে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের জিঘাংসার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়। বাঙালি জাতির জাগরণে অগ্রণী ভূমিকার কারণে বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয় সুপরিকল্পিতভাবে। ২৫ মার্চ রাতেই প্রাণ হারান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কজন খ্যাতনামা অধ্যাপকসহ শতাধিক বুদ্ধিজীবী। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে ধারাবাহিকভাবে এ হত্যাকান্ড অব্যাহত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের মাত্র এক দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে ব্যাপকসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। বাংলাদেশের মানুষ যাতে স্বাধীন দেশে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানি বাহিনীর পদলেহীরা এ হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বুদ্ধিজীবী দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তার মধ্যে আছেন অধ্যাপক জি সি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজাম উদ্দীন আহমেদ, গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক-সাংবাদিক সেলিনা পারভীনসহ নাম জানা-অজানা অনেকে। বুদ্ধিজীবী হত্যায় মূলত ভূমিকা রেখেছে পাকিস্তানি হানাদারদের এ-দেশীয় বশংবদরা। আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর মনুষ্যবেশী পশুরা বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা না দিলে, তাদের চিনিয়ে না দিলে তাঁরা যে প্রাণ হারাতেন না তা সহজেই অনুমেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এই ঘাতক-দালালরা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে অপরাধীদের শেষ রক্ষা হয়নি। গত ছয় বছরে বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে। আরও কয়েকজনের জন্য অপেক্ষা করছে ফাঁসির দড়ি। ঘাতক-দালালদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার এ প্রয়াস অভিনন্দনযোগ্য। ’৭১-এর ঘাপটি মেরে থাকা ঘাতক ও তাদের এজেন্টরা এ বিচার প্রক্রিয়া যাতে বানচালের সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ’৭১-এর সব মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের দ্রুত বিচার সম্পন্নের মাধ্যমে এসব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর