মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা

উদ্যোগ মহৎ ত্রুটিগুলো ক্ষমাহীন

মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের চার যুগ প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী তথা রাজাকারদের একাংশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধীদের মদদে সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যদের হাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সে প্রক্রিয়া থেমে যায়। পরে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী হওয়ারও সুযোগ পায়। স্বাধীনতাবিরোধী তথা রাজাকার আলবদর আলশামস ও তথাকথিত শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা লোপাট করারও চেষ্টা চালায় তারা। সেদিক থেকে স্বাধীনতার চার যুগ পর স্বাধীনতাবিরোধী তথা রাজাকার আলবদর আলশামসদের তালিকা প্রণয়ন করা নিঃসন্দেহে কঠিন কাজ। তার পরও সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। তবে তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বাধীনতাবিরোধী তথা রাজাকার আলবদর আলশামসদের বশংবদদের কারসাজিও যে কাজ করেছে কয়েকজন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধার নাম এ তালিকায় অন্তর্ভুক্তি তারই প্রমাণ। ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সংগত কারণেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, রাজাকারদের কেউ তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব পেলে মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার আর রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানানোর অপচেষ্টা চলতে পারে। সদ্য প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায়ও এ ধরনের ইচ্ছাকৃত ভ্রান্তির ঘটনা ঘটেছে যা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। তবে এটি এজন্য স্বস্তিদায়ক যে, এর মাধ্যমে দেশের প্রশাসনযন্ত্রে এমনকি সরকারি দলে স্বাধীনতাবিরোধীদের অবস্থান যে থাকতে পারে সে সন্দেহের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সরকারের উচিত হবে ঘাপটি মেরে থাকা বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজে বের করা। ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও আমরা স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাই। এ তালিকা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রণয়ন করা হয় সে বিষয়েও নজর দিতে হবে। ঘোষিত তালিকায় যে ভুলত্রুটি অথবা ইচ্ছাকৃত ত্রুটির অবতারণা ঘটেছে তার দ্রুত সংশোধনীও কাম্য। আমাদের বিশ্বাস, সংবেদনশীল এ ইস্যুর ক্ষেত্রে সরকার সব ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ারই চেষ্টা করবে। নির্ভুলভাবে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রণয়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হবে- এমনটিও প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর