পাকিস্তানের পেশোয়ার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমদ শাহর নেতৃত্বাধীন বিশেষ আদালত রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। এই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন সিন্ধু হাই কোর্টের বিচারপতি নাজার আকবার ও লাহোর হাই কোর্টের বিচারপতি শহীদ করিম। পাকিস্তানকে বলা হয় চক্রবক্র ভূতের দেশ। এ দেশটির ৭১ বছরের ইতিহাসের বেশির ভাগ সময় সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেশের শাসনভার নিয়ন্ত্রণ করেছে। পাকিস্তান ভাঙার জন্যও সামরিক শাসকদের অবৈধ ভূমিকা অনেকাংশে দায়ী। তার পরও পাকিস্তানের অতিক্ষমতাশালী সামরিক শাসকরা এতকাল ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বেসামরিক আদালতে দেশদ্রোহের অভিযোগে কোনো সামরিক কর্মকর্তার বিচারের রায় এলো। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান শাসন করেন মোশাররফ। ২০১৩ সালে দেশটির সাবেক এই স্বৈরশাসককে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। সেই মামলায় এই সাড়াজাগানো রায় এলো। জরুরি অবস্থা জারি, বেআইনি উপায়ে বিচারপতি বরখাস্ত, বেনজির ভুট্টো হত্যা ও লাল মসজিদে তল্লাশি অভিযানসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায়ও অভিযুক্ত হন পাকিস্তানের এই সাবেক সামরিক শাসক। পরে তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পান মোশাররফ। তার পর থেকে আরব আমিরাতে আছেন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে দেওয়া মৃত্যুদ- রায়ের সমালোচনা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সেনাবাহিনী যে বিবৃতি দিয়েছে তাকে প্রচ্ছন্ন ‘হুমকি’ বলে অভিহিত করা যায়। বিবৃতিতে প্রকারান্তরে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের পক্ষে সাফাই গাওয়া হয় এবং বলা হয় একজন সাবেক সেনাপ্রধান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট যিনি ৪০ বছর ধরে দেশের সেবা করেছেন তিনি কিছুতেই রাষ্ট্রদ্রোহী হতে পারেন না। বিবৃতিতে পারভেজ মোশাররফের বিচারে বিশেষ আদালত গঠন এবং তার আত্মরক্ষার অধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করা হয়। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর বিবৃতি সভ্য দুনিয়ায় কল্পনা করাও কঠিন। তবে পাকিস্তান বলে কথা!