সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মুক্তিযুদ্ধ

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের মিছিলে যে সাতজনের আত্মত্যাগ ও বীরত্বে জাতি তাঁদের ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে মরণোত্তর সম্মান দিয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান তাঁদের অন্যতম। ১৯৫৩ সালে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ খালিশপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে তিনি জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আক্কাস আলী ও মাতা কায়দাছুন নেছা। অতি শৈশব থেকেই বাস্তবতার সঙ্গে তাঁকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছিল। দারিদ্র্যের নির্মমতা তাকে উচ্চশিক্ষার পথ থেকে বঞ্চিত করলেও জীবন সংগ্রামী হামিদুর পিছিয়ে থাকতে চাননি। তাই ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ২৫ মার্চে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে দেশপ্রেমিক হামিদুর রহমান দেশ মাতৃকার মুক্তির স্বপ্নে যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। অংশগ্রহণ করেন একের পর এক যুদ্ধে। ১৯৭১ এর অক্টোবর। হামিদুর রহমান মুক্তিবাহিনীর সাহসী সদস্য হিসেবে যুদ্ধ করছিলেন সিলেট শ্রীমঙ্গল এলাকায়। এখানে অবস্থিত ধলই বিওপি-তে পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি দখল করতে পারলে মুক্ত করা যায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ২৮ অক্টোবর অতি প্রত্যুষে মুক্তিবাহিনী শুরু করল আক্রমণ। চা বাগানের ভিতর হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেলেন হামিদুর তাঁর দলের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নির্দেশে একটি হালকা মেশিনগান সঙ্গে নিয়ে। শত্রু ঘাঁটির একেবারে কাছে গিয়ে তিনি আকস্মিক হামলা চালালেন শত্রু দলের ওপর। নিহত হলো প্রতিপক্ষের অধিনায়কসহ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য। শত্রু সৈন্যরা পরিস্থিতি সামলে নিয়ে শুরু করল পাল্টা আক্রমণ। কিন্তু হামিদুর রহমান পিছু হটলেন না। প্রাণপণে লড়াই চালিয়ে গেলেন। হঠাৎ একটি বুলেট এসে বিদ্ধ হলো তাঁর কপালে। হামিদুর রহমান বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শহীদ হলেন। পাঁচ দিন অবিরাম যুদ্ধের পর মুক্ত হলো ধলই বিওপি। হামিদুর রহমানের আত্মত্যাগ রচনা করল আমাদের মুক্তির পথ। মুক্তিযুদ্ধে বিরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হন। সুদীর্ঘ ৩৬ বছর পর তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় এবং ১১ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে ঢাকার মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এ মহান বীরের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিগত ১৪-০১-২০০৮ তারিখে শহীদের নিজগ্রাম খোর্দ্দ খালিশপুরের নাম পরিবর্তন করে ‘হামিদ নগর’ করা হয়েছে এবং হামিদ নগরে তাঁর নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ মাঠে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় ৫৫,৯৮,৩৪০/৪৩ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ২ হাজার ৩৪৯টি বই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর