শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বদেশপ্রীতি নবীদের সুন্নত

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন

স্বদেশপ্রীতি নবীদের সুন্নত

স্বদেশপ্রীতি ও স্বদেশচেতনা হচ্ছে সুন্নতে আম্বিয়া। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়াসাল্লাম ছিলেন স্বদেশপ্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন। নবুয়ত-পরবর্তী প্রথম পর্যায়ে ১৩ বছর তিনি অত্যন্ত বাধাবিপত্তির মধ্যে মক্কায় ধর্মপ্রচারে ব্রতী ছিলেন। নিবর্তন ও সংঘাতের তা-ব যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন ৬২২ খ্রিস্টাব্দে দাওয়াতের আরেক দিগন্ত উন্মোচনের উদ্দেশ্যে হিজরত করে মদিনা রওনা হন। মদিনা যাত্রাপথে তিনি জন্মভূমি মক্কার পানে তাকিয়ে অশ্রুপাত করেন বারবার। তিনি মক্কাকে উদ্দেশ করে বলেন,  ‘তোমার শহর কতই না সুন্দর, আমি তোমায় ভালোবাসি। আমার জনগণ যদি আমাকে বের করে না দিত কখনো আমি তোমায় ছেড়ে অন্য কোথাও যেতাম না।’ তিরমিজি। ৬২২ থেকে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মদিনা হয়ে ওঠে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক দীন প্রচার, দীনের আরকান-আহকাম বাস্তবায়ন, রাষ্ট্র পরিচালনা, শান্তিচুক্তি সম্পাদন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপন, আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে ‘মদিনা সনদ’ ঘোষণার কেন্দ্রস্থল। এ মদিনায় রচিত হয় তার সমাধিস্থল ‘রওজা আকদাস’। তিনি মদিনার জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করেন। মক্কার পাশাপাশি মদিনার প্রতি ছিল তাঁর আজীবনের ভালোবাসা। তিনি বলেন, ‘আমি উহুদ পর্বতমালাকে ভালোবাসি আর উহুদও আমায় ভালোবাসে।’ বুখারি। হিজরত করে মদিনা গেলেও মক্কার সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন, ফলে স্বল্পসময়ের ব্যবধানে মক্কা বিজয় সম্ভব হয়। বিজয়ের দিন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ না নেওয়া এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার ফলে দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করে তিনি জনগণের মাঝে সাম্য, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেন। জনসাধারণকে ইসলামের রীতিনীতি সম্পর্কে সম্যক অবহিত করেন। শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পূর্বশর্ত হচ্ছে দেশকে শত্রুমুক্ত রাখা। অভ্যন্তরীণ শত্রু ও বহিঃশত্রু মিলে দেশকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করে দিতে পারে। সেজন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরতের অব্যবহিত পর বিবদমান দলগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন কার্যকর পন্থায়। ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমানদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি সামাজিক চুক্তি সম্পাদন করেন যা ‘মদিনা সনদ’ নামে সমধিক খ্যাত। এ সনদের উল্লেখযোগ্য শর্তের মধ্যে রয়েছেÑ ‘মদিনা প্রজাতন্ত্র যদি দেশীয় ও বহিঃশত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে স্ব স্ব দল ও গোত্র ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর মোকাবিলা করবে।’ জাতীয় অখ-তা ও স্বাধীনতা রক্ষায় রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেওয়া নফল ইবাদতের চেয়েও সওয়াব বেশি। ‘আত-তারগিব ওয়াত তারহিব’ নামক গ্রন্থে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস উল্লিখিত হয়েছে। এতে তিনি বলেন, ‘লাইলাতুল কদরের চেয়ে আরও একটি পুণ্যময় রাতের খবর তোমাদের দেব নাকি? সাহাবিরা জবাব দেন বলুন ইয়া রসুলুল্লাহ! কোনো সৈনিক রাতে এমন এক কঠিন ভীতিপ্রদ চৌকিতে দাঁড়িয়ে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে; যে কোনো মুহূর্তে শত্রুর উদ্ধত অস্ত্রের আঘাতে তার বক্ষ বিদীর্ণ হতে পারে এবং জীবনে আর স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখার সুযোগ না-ও আসতে পারে সেই রজনি লাইলাতুল কদরের চেয়ে আরও বরকতপূর্ণ।’ দেশপ্রেমিক নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। প্রধান কর্তব্য হচ্ছে রাষ্ট্রের অখন্ডতা ও স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখা।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।

সর্বশেষ খবর